অমৃতের সন্ধানে- ৮
বেশ কয়েকদিন পরের ঘটনা। বিকাল বেলা কাচারিঘরে সবাই বসে আলাপ করছে স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে। মানিক সবার পিছনে বসে আছে অন্যমনষ্কভাবে।
মানিক স্থির দৃষ্টিতে লক্ষ্য করছিল আলাপরত বেলালের দিকে। ওর সাথে কখনো আলাপ হয়নি মানিকের। শিউলিকে অবশ্য বলেছিলো একদিন আলাপ করিয়ে দিতে।
-আচ্ছা ঠিক আছে, সে দেখা যাবে। বলে শিউলি প্রসঙ্গ পালটিয়েছিল।
কেন জানি বেলাল সম্পর্কে জানার ইচ্ছাটা প্রবল মানিকের। মানুষ হিসাবে ও কেমন, ওর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি।
আজ সেকথা ভাবতে ভাবতে বেলালের দিকে তাকিয়ে থাকা অবস্থায় চোখটা একটু ঘুরাতেই অদূরে উপবিষ্ট শিউলির সাথে দৃষ্টি বিনিময় হলো। শিউলি একটু হাসলো মিষ্টি করে।
-শিউলি বোধহয় বেশ কিছুক্ষন ধরে বেলালের দিকে অভাবে তাকিয়ে থাকা মানিককে দেখছিল। ভাবতেই খুব অস্থস্তি লাগলো মানিকের। ও তৎক্ষনাৎ উঠে কাচারিঘর ত্যাগ করলো।
শিউলি অবাকই হলো।
মানিকের ওভাবে হটাৎ করে উঠে যাওয়াটা ওর কাছে অস্বাভাবিক লাগলো।
-কি ভেবে উঠে গেল মানিক? ভাবলো শিউলি।
মানিকের আভিব্যক্তিটা ব্যতিক্রমী। ওর নিশ্চুপ অবয়ব যেন কথা বলে। ওর চোখে মুখে কিছু অভিব্যক্তি প্রতিভাত হয়ে থাকে যা শিউলির খুবই পরিচিত। সে সব ভাবতে ভাবতে শিউলি অন্যমনল্ক ভাবে তাকিয়ে থাকা মানিককে দেখছিলো।
সবাই বেলালের কথা শুনছে, মন্তব্যও করছে কেউ কেউ। শিউলি অমনি ভাবে বসে রইলো। বেলালের একটা কথাও আর ওর কানে ঢুকলো না।
শুধু মানিকের মুখটা ওর চোখের সামনে ভাসতে লাগলো। ওর মনে হলো মানিকের মুখের উপর একটা দারূন আকাঙ্ক্ষার অভিব্যক্তি আছে। মনে হল কারো দেয়া একটু ভালবাসা মানিক রাজমুটের মত সযত্নে মাথায় পরে থাকবে।
শিউলির মনে হতে লাগলো যে ওর চোখের চাহনি, প্রতিটি পলক, অঙ্গ প্রত্যঙ্গের প্রতিটি নড়াচড়া, ওর প্রতিটি নিঃশ্বাস কথা বলে।
ও যেন সবসময় কিছু একটা খুঁজে ফেরে।
-ওঠো, সন্ধ্যে গড়িয়ে গিয়েছে এখন যাওয়া যাক।
বেলালের ডাকে সম্বিৎ ফিরলো ওর।
বেলালের কণ্ঠ যেন কর্কশ আদেশের সুর বলে শিউলির কাছে বোধ হলো। সরাসরি বেলালের চোখে তাকালো শিউলি। ভাবাবেশ শুণ্য আকাঙ্ক্ষাবিহীন অভিব্যক্তি। যেখানে অর্জনের তাড়না নেই, হারানোর আশঙ্কা নেই সে মুখগুলো বোধহয় এমনি ভাবলেশহীন হয়। ভাবলো শিউলি।
কথাটা বলে বেলাল অপেক্ষা না করে কারো একজনের সাথে যুদ্ধের আলোচনা করতে করতে বেরিয়ে গেল।
অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে, চারিদিক একদম নিশ্চুপ। একটা গুমোট পরিবেশ। যে কোন সময় দম বন্দ হয়ে যাবে বলে শিউশির মনে হতে লাগলো।
শিউলিদের বিল্ডিংটার অবস্থান পুরো ভিটে বাড়ীটার সামনের দিকে এক ধারে। পুরনো আমলের উচু ভিতের উপর দোতলা বাড়ীটার গা ঘেসে সান বাধানো ঘাটওয়ালা বড় একটা দীঘি।
বাড়ীর একতলায় বসার বড় হল রূমটার সাথে লাগোয়া রূমটাতে বেলাল থাকে। ঘরটাতে আলো জ্বলছে। এ সময়টাতে বেলাল পড়াশোনা করে। ঐ রূমটার গা ঘেসেই উপরে উঠার সিড়ি। উপরে দুটো রূম, রূম দুটোর মাঝখানে বসার জন্য খালি প্রশস্ত জায়গা। উভয় তলাতেই রূমের সাথে সামনের দিকে চওড়া বারান্দা।
শিউলি সিড়ির ধারের রূম অর্থাৎ বেলাল যে রূমে থাকে তার ঠিক উপরের রূমে থাকে। দোতলার অন্য রূমটাতে ওর বাবা থাকেন। বাবার রূমের দরজাটা ঠেলে দেয়া, ভিতরে আলো জ্বলছে। শুধু শিউলির রূমটায় অন্ধকার।
শিউলি সরাসরি ছাদে উঠে গেল। চিলেকোঠার ঘরটা বাদে বাকিটা ফাঁকা। ছাদের এক পাশে দাড়ালে পুরো দিঘীটা দেখা যায়। এটা ওদের পারিবারিক দিঘী, ওদের পর দাদার আমলে খোড়া। গ্রামের অনেক মানুষই এখানে গোসল করে। পুব পশ্চিম লম্বা দীঘির দুই প্রান্তে মুখোমুখি সানবাধানো দুটো ঘাটের মধ্যে বাড়ীর সাথে লাগানো ঘাটটা শুধু এ বাড়ীর মানুষই ব্যবহার করে।
জোৎস্না রাত। মৃদু বাতাসে দিঘীর পানির ঢেউগুলো ঝলমল করছে, অর্ধ গোলাকার চাঁদটা জলের উপর নাচছে। দিঘীটার ওপাড়ে জংলা, অন্ধকার ওখানে জমাট বেধেছে। জংগলটার পার হলেই ওদের পারিবারিক গোরস্থান। ভাবতেই বুকচিরে একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে আসলো শিউলির।
জীবনের হিসেবটা এই মুহুর্তে কেমন জানি গরমিল মনে হতে লাগলো। জীবনটা কি শুধুই নিরাপদ আশ্রয়ের সন্ধান মাত্র, আর নিরাপদ আশ্রয়ের ব্যবস্থা হওয়ার মধ্যেই কি জীবনের সার্থকতা?
ওদের পারিবারিক গোরস্থানটা পার হয়ে একটু গেলেই একটা গাঙ। শীতে সরূ হয়ে যায়, তখন বাশের সাকো দিয়ে মানুষ পারাপার করে। কিন্তু এখন পানিতে ভরপুর। দিনের বেলা ছাদে দাড়ালে গাছের ফাক ফোকড় দিয়ে দেখা যায় গাঙটা।
ঠান্ডা বাতাসের একটা ঝাপটা ওর মুখে এসে লাগলো। মনে হচ্ছে দুরে কোথাও বোধহয় ঝড় বৃষ্টি হয়েছে।
হটাৎ করেই দীঘির ঘাটের দিকে নজর পড়াতেই শিউলি দেখলো সিড়ির এক পাশে অনেকগুলো ধাপের মাঝামাঝি স্থানে কে যেন একজন বসে আছে নীরবে নিঃশব্দে। কতক্ষন ধরে বসে আছে কে জানে এতক্ষন চোখেই পড়েনি।
-বেলাল নাতো!
ভাবনাটা মাথায় আসতেই অনেকটা নিজেকে কটাক্ষ করে নিজের মনে একটু হাসলো শিউলি।
-চাঁদ দেখে নষ্ট করার সময় আর ধৌর্য্য কোনটাই ওর নেই। ভাবলো শিউলি।
-তাহলে- – মানিক!
কথাটা ভাবতেই ওর সারা শরীর মন এক অজানা শিহরণে উদ্ভাসিত হয়ে উঠলো।
শিউলি কি ভেবে মন্ত্রমুগ্ধের মত সিড়ি বেয়ে নিচে নেমে আসলো। ঘাটের কয়েকটা সিড়ি নামতেই ও নিশ্চিত হলো যে মানিক বসে।
মানিকের সাথে প্রকৃত অর্থে শিউলির পরিচয় এই কয়েকদিনের। তবে ওর সন্মদ্ধে অনেক কিছুই জানে শিউলি আগে থেকেই। শুনেছে রাঙাদাদির কাছে। একটা বঞ্চিতের ব্যথা সব সময়ই মানিকের মনে গুমরে মরে কিন্তু অবুঝ মানিক সে ব্যথাটার স্বরূপ ঠিক বুঝতে পারে না। মা মরা অবুঝ একটা শিশুকে কি ভাবে মানুষ করেছেন তার সবকিছু রাঙাদাদির কাছে শুনেছে শিউলি।
শিউলির মা মারা যাওয়ার পর রাঙাদাদি যখন মানিকের কথা বলে ওকে শান্তনা দিতেন তখনই শিউলি ওর মনের গভীরে সেই ছোট কালে দেখা মানিকের একটা ছবি একেছিল। মাকে হারানোর অসহ্য যন্ত্রনা লাঘবে শিউলি তখন থেকেই মানিককে ওর সঙ্গি হিসাবে কল্পনা করেছে। তায়তো মানিককে দেখার পর থেকে ওকে অত আপন অত কাছের একজন মনে হয়েছে।
পায়ের শব্দে মানিকের চিন্তায় ছেদ পড়লো। অমনি ভাবে বসে ভাবলো- শিউলি নাত। ভাবনাটা ওর শরীরে কাটা দিল। ও জোর করে ভাবনাটাকে ঠেলে দিতে চেষ্টা করতেই শিউলির কণ্ঠ ওকে হতচকিত করে দিল।
-একা বসে আছো!
মানিক কি বলবে বা কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না।
শিউলি নির্দ্বিধায় ওর পাশে বসলো।
শিউলির গায়ের মাদকীয় গন্ধটা বসন্তের মৃদু মন্দ বাতাস মানিকের সারা শরীরে বুলিয়ে দিতে লাগলো। এভাবে একাকী শিউলির এত কাছে আগে কখনো বসেনি মানিক। দিঘির জলের দিকে তাকিয়ে ওভাবেই বসে রইলো অনেক্ষন দুজনে।
-বেলাল সাহেব কি বাইরে কোথাও গিয়েছেন?
-নাহ, কেন বলো তো?
শিউলি একটু অবাক হলো আর একটু বিরক্তিও বোধ করলো। কথাটা বলতে বলতে শিউলি ওর দিকে তাকালো।
মানিক দিঘীর জলের দিকে তাকিয়ে। ওর বেশ লম্বা ঝিরঝিরে অগোছালো চুলগুলো মৃদু বাতাসে উড়ছে।
মানিকের সবকিছুই যেন একটু এলোমেলো। তার চাক্ষুস কিছু প্রমান সব সময়ই চোখে পড়ে। যেমন ও জামা পরলে কলারের অর্ধেকটা হয়তো উল্টে থাকলো, অথবা সার্টের কিছুটা অংশ ইন করা হয়নি, বা জুতার ফিতার একটা ধার বড় হয়ে মাটির সাথে ঘসা খাচ্ছে। আর চুল গুলোতো সব সময়ই এলোমেলো।
অগোছালো এ সবকিছু যেন ওর দিকে দরদী কাউকে ডাকে, আকর্ষন করে ওগুলো গুছিয়ে ঠিকঠাক করে দেয়ার জন্য।
এই মূহুর্তে বসন্তের বাতাস যেন সেই উদ্দেশ্যেই ওর চুলগুলোকে এলোমেলো করে আদরের পরশ বুলিয়ে দিতে আহবান করছে।
মানিক ঘাড়টা ফিরিয়ে শিউলির দিকে তাকালো। ওদের চোখাচোখি হলো, কেউ চোখ নামালো না, কিছু বললোও না।
ও পাড়ের ঘাটে কে যেন পানি তোলার জন্য কলস ডোবালো।
দুজনেই চমকে উঠে চোখ নামিয়ে নিলো।
-তোমার চুলগুলো ভারী সুন্দর।
কথাটা বলে শিউলি নির্দ্বিধায় ওর হাতের আঙুল গুলো সযত্নে মানিকের এলোমেলো চুলের মধ্যে সঞ্চালন করতে লাগলো।
মানিক কিছুটা হতবিহবল হয়ে বসে রইলো।
-তুমি বড় হয়ে কি করবে ভাবছো। আমি জানি তুমি খুব ভালো ছাত্র।
স্নেহভরা কণ্ঠ শিউলির।
-ডাক্তার হবো। পরিস্কার প্রত্যয়ী উত্তর।
একটু থেমে আবার বললো- বেলাল সাহেবের মত।
-বেলাল সাহেবের মত মানে! শিউলি কিছুটা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো।
ওর কথার কোন উত্তর দিল না মানিক।
I had a long career in Army. I was trained to follow orders, instructions and set rules, taking those as axiomatic. That strayed me a bit from free thinking as happens with all technology users. Basically I am a free thinker always and now in search of some basic truth in my own way. ([email protected]).
I was very pleased to uncover this great site. I need to to thank you for ones time for this fantastic read!! I definitely appreciated every bit of it and I have you bookmarked to look at new information on your blog.
Can I simply just say what a relief to uncover somebody that really knows what they are discussing on the internet. You definitely realize how to bring a problem to light and make it important. A lot more people should check this out and understand this side of the story. I cant believe you arent more popular because you definitely have the gift.
[url=https://viagrageneric.cyou]oral sildenafil 100 mg[/url]
[url=https://buyviagra.cyou]viagra 50 mg tablet[/url]
[url=https://lyrica.press/]buy lyrica 150 mg online cheap[/url]
[url=https://lyrica.quest/]pregabalin 75 mg cheap[/url]
[url=https://lyrica.top/]lyrica 75 mg for sale[/url]
[url=https://lisinopril.press/]lisinopril tablets[/url]
[url=https://gabapentin.press/]order gabapentin 100 mg without prescription[/url]