অমৃতের সন্ধানে -৫
পারাপারের একমাত্র ফেরিটা ছেড়ে চলে গেছে। কি আর করা, গাড়ীটা রাস্তার একটু পাশ করে দাড় করালো। সামনেই প্রশস্ত নদীটা। দূর নদীর বুকে ফেরীটা এখনো দেখা যাচ্ছে আবছা আবছা।
গাড়ীটা থামতেই বিভিন্ন মন্তব্য করতে করতে ওর সাথে আসা অন্যান্য সবাই বেরিয়ে পড়লো।
চশমাটা মুছে নিয়ে নদীর দিকে তাকালো মানিক। গাড়ীর ষ্টিয়ারিংএর উপর চিবুকটা ঠেস দিয়ে কি করা যায় এখন তাই ভাবছিলো।
একদম সামনে দিয়েই নদীটা বয়ে চলেছে।
বসন্তের এই পড়ন্ত দুপুরে কয়েকটা ঘুঘু পাখির ডাক আর নদীর পানিতে মৃদু ঢেউ তোলান বাতাসের শব্দ বাদে অন্য কোন কর্মতৎপরতায় চোখে পড়ছে না।
সামনে সব কিছু ঝাপসা অস্পষ্ট। ওপারটা দেখা যাচ্ছে কিনা ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। ওপারে যেন অমৃতপুর! মনে হচ্ছে তৃপ্তিতে ভরা। জ্বালা নেই বেদনা নেই। পদে পদে মৃত্যুর চিন্তা নেই।
পার হওয়াটাই খুব কষ্টের মনে হয়, এপারের সব কিছুই টেনে ধরতে চায়। কিন্তু একবার গেলে বোধহয় আসতেই ইচ্ছা লাগবে না।
যাওয়ার জন্যই এসেছে মানিক। মন বলছে একটু দেরী হলেও যাওয়ার ফেরীটা ও পাবেই। একটু অপেক্ষা মাত্র।
জীবন ওকে টানতে টানতে এ অব্দি নিয়ে এসেছে।
অনেক ভেবেছে মানিক। অনেক হিসেবও করেছে। আজ মানিক যেখানে দাড়িয়ে আছে তার সবটুকুই ওর নিজের অর্জন। মানুষ নিজের অর্জনের দিকে তাকিয়ে মনে মনে গর্ববোধ করে- অর্জনের সার্থকতা দেখানো আর তা থেকে অপরকে দান করার মধ্যে তৃপ্তি লুকিয়ে থাকে। কিন্তু এ সবের ভাগ নেয়ার জন্য যদি কোন দরদী কেউ না থাকে তাহলে যে সব অর্জন বৃথা মনে হয়।
সারা জীবন ধরে আনমনে সোনার প্রাসাদ গড়তে গড়তে হটাৎ খেয়াল হয়ে যদি কেউ দেখে যে, চাদিদিকে শুধু ধুধু বালুচর মনুষ্যবিহীন প্রান্তর। তাহলে সে প্রাসাদে তো নিঃশ্বেস বন্দ হওয়ার উপক্রম হবেই। আর নিজের গড়া সে প্রাসাদ ছেড়ে পালানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠবে।
রেশমের গুটিপোকা নিজের অজান্তে দিনে দিনে ওর চারপাশে শক্ত দেয়াল গড়তে গড়তে নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর হটাৎ ঘুম ভেঙ্গে মনে হয় দম বন্দ হয়ে যাচ্ছে। আর তায় সে নিজের কষ্টে গড়া প্রাসাদ ভেঙ্গে গুড়িয়ে বের হয়ে আসতে চায়। ঠিক তেমনি মানিকের এত সব অর্জন যেন ওকে শ্বাস রূদ্ধ করতে উদ্দত। তায়তো এ সব ছেড়ে ও পালিয়ে বাচতে চায়।
না ওর যাওয়াটা অন্যান্যদের মত কোন অভিযান নয়। ওখানে কি পাবে সেটা অনিশ্চিত। তবে ওখানে গেলে এখানকার সব কিছুই ভূলে থাকা যাবে তাতেই ওর তৃপ্তি। ওখানে ও একা দ্বীপবাসী যন্ত্রনাভোগকারী থাকবে না অনেকের মধ্যে একজন হয়ে নিজের কষ্ট নিজের ব্যথা ঢাকতে পারবে তার কিছুই জানা নেই ওর।
মনে হচ্ছে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যাবে ওপাড়টা। মাঝখানে মাত্র এই নদীটা। পাড়ে পৌছে গিয়েছে, পারাপারের ফেরিটাও দেখেছে।
শুধু কেবল অপেক্ষার পালা।
যা কিছু ফুরিয়ে যায়, যাকে পরিমাপের গন্ডিতে বাধা যায় অর্থাৎ যা কিছু দব্যসামগ্রী ও গুলোর অভাব মানিককে খুব একটা স্পর্শ করেনি কোনদিন। কিন্তু যা কিছু ধরা যায় না ছোয়া যায় না, পরিমাপও করা যায় না, দেওয়ার মধ্যেই যাতে তৃপ্তি সেই জিনিসটার অভাব ওর জীবনে একদম শুরূ থেকেই। কোথায় না ছুটেছে ও সে তৃপ্তির খোঁজে, কিন্তু শুধু ফিরে ফিরে এসেছে।
সবুজ ক্ষেতের বুক চিরে চিরে রাস্তা আর মেঠো পথ গুলো চলে গিয়েছে। ওর নানীর বাড়ীতে যাওয়ার একপেয়ে রাস্তা আর এই মেঠো পথগুলোর সাথে অনেক মিল। সেখানে প্রকৃতি কথা বলে। ওকে ছোয়া যায় ধরা যায় গন্ধ নেয়া যায়।
প্রকৃতি আসলে খেয়ালী। আর বিচিএ সব খেয়াল এই প্রকৃতির। একটা সৃষ্টির সাথে আর একটার কোন মিল নেই। কিন্তু একটা ব্যপারে বোধহয় অমিল করতে পারেনি। দুখী মানূষের মুখ! মূখগুলো সব একই কথা বলে।
কিছু মানুষ বোধহয় জন্ম গ্রহন করে শুধু অতৃপ্ততার অমৃত আস্বাদ গ্রহনের জন্য। এই অতৃপ্ততা মেনে নিয়ে পথ চলার মধ্যেই খুজতে হয় তৃপ্তি। ব্যপারটা ভাবতে আর কল্পনায় নিজেকে ঐ স্থানে প্রতিষ্ঠা করলে নিজের কাছে নিজেকে অতিমানবিক লাগে। কিন্তু মানিক অতিমানব হতে চায় না। ওর চাওয়া পাওয়ার হিসাবটা অন্য দশ জনের মত গদ বাধা হলেই ওর ভালো হতো।
ওকে বোঝার মত ওর অভিমানকে একটু প্রশ্রয় দেয়ার মত কোন দরদী ওর জোটেনি কোনদিন। শুধু ওর নানী বাদে।
অভিমানটা ওর সৃষ্টিকর্তার উপর।
কষ্ট দেবে দাও, তোমার সৃষ্টি তুমি চালাও
যেমনি তোমার মন ভরে।
অধম সৃষ্ট আমি , কেড়ে নিলে মোর শীর্ণ অম্বর খানি
যা দিয়ে ঢেকেছিনু বেদনাটারে।
কেন দিলে এত ব্যথা তুমি, তা শুধু তুমিই জানো অন্তর্যামী
না আমার কোন অভিযোগ আছে।
শুধু ব্যথা ঢাকার তরে, দিও আবরন মোরে
প্রকাশ করো না তুমি ওদের কাছে।
কোন কোন সময় নিজের কাছে নিজের জন্মটা উদ্দেশ্যবিহীন অপ্রয়োজনীয় মনে হয় মানিকের।
ছোট কাল থেকেই নানী বাড়ীর প্রতি ওর টানটা অন্য রকম। ছুটিতে যখনই ওর নিজের ইচ্ছায় বেড়াতে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে ও তখনই নানী বাড়ীতে যাওয়াটাকেই বেছে নিয়েছে।
জীবনটা ওর কাছে একঘেয়ে। তবে শুধু নানী বাড়ীটা আর নানীর আদর বাদে। ওখানে সবকিছুই বৈচিত্রময় অনন্ত অসীম।
সেখানে যাওয়ার রাস্তাটার দুধার বিভিন্ন ঋতুতে নতুন নতুন রূপ ধারন করে। সেখানকার প্রকৃতি বহুরূপা সব কিছুকেই যেন বুকে টেনে নেয়, ঠিক যেমনটি ওর নানীর আদর।
ও ওর নানীর সোনা মানিক। এই বৃদ্ধা মহিয়সি রমণী ওর জীবনের একমাত্র অকৃত্তিম ভালোবাসা। ওর মা ওর নানীর হাতের উপর মারা গিয়েছিলেন ঐ বাড়ীতেই। ওখানেই তাঁকে সমাহিত করা হয়েছে।
ওর মা যখন মারা যায় তখন ওর বয়স এক বছরের মত। যার ফলে ওর মা যে কেমন দেখতে ছিল সত্যি কথা বলতে মানিক তা জানে না।
ওর নানী ওকে কোলে তুলে নিলেন। মা হারোনো এই অবুঝ শিশুর দিকে তাকিয়ে ঐ বৃদ্ধা নিজের কন্যা বিয়োগের শোকটাও ঠিক মত করতে পারলেন না।
কোন কিছুর মূল্য বুঝে উঠার আগেই ওর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটা হারালো মানিক!
অবুঝদের জন্য এটা একটা বড় সুবিধা। কিন্তু মানিক বোধহয় বুঝতো যে শুরূতেই ওর এমন কিছু একান্ত পাওনা জিনিস থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে যা ছিল ওর জম্মগত অধিকার।
ওর নানী রোকেয়া বেগম ছিলেন একজন সচেতন মহিলা। মাতৃ হারা মানিকের কচি মনের মধ্যে যেন মায়ের অভাবটা গেথে না থাকে সে জন্য তিনি ছিলেন তৎপর। তবুও দিনে দিনে ওর মধ্যে একটা মানষিকতা বাসা বাধলো যাকে ‘বঞ্চিতের মানষিকতা’ বলা যায়। সবার অলক্ষেই ধীরে ধীরে মানিকের অবচেতন মনে একটা ধারণা জন্মালো যে সবাই ওকে বঞ্চিত করে।
ছোট কাল থেকেই ও খুব জেদী। হয়তো হটাৎ করে ও জিদ ধরলো যে দুধ খাবে, তখন প্রকৃতই বাড়ীতে দুধ নেই। কিন্তু এই নেই জবাব কখনোই ওর অবুঝ মন সঠিক বলে মেনে নিতে নারাজ। ওর ভাবনা যে- আছে কিন্তু ওকে দেয়া হচ্ছে না।
ও বুক ফাটা চিৎকার করতে করতে বললো- তবে পানির মধ্যে আটার গুড়ো মিশিয়ে সাদা দুধের মত বানিয়ে দাও। মহীয়সী নানী তায় করলেন।
মানিক তখন পাচ ছয় বছরের ছেলে। নানীর ওখানে ওর কোন এক আত্মীয়া এসেছেন বেড়াতে। ভদ্রমহিলার সাথে মানিকের থেকে একটু ছোট একটা ছেলে। নানি আর ভদ্রমহিলা বসে গল্প করছেন।
মানিক ঘুর ঘুর করছে নানীর আশপাশ আর কাজের মহিলা ওর পিছন পিছন হাটা হাটি করে ওকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। ওদিকে গল্পেরত ভদ্রমহিলা তার কোলে বসিয়ে ছেলেকে আদর করে খাওয়াচ্ছে। কিন্তু ছেলেটা আহল্লাদের অতিশয্যে খাওয়ার চেয়ে ছড়াচ্ছে বেশী।
আজ মানিক জিদ ধরেছে কাজের বুয়ার হাতে খাবে না। ও তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে।
মানিক কি ভেবে হটাৎ করেই ছেলেটার নাদুস নুদুস পায়ের আঙুলে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দিল। ছেলেটা ব্যথায় চিৎকার করে কেঁদে উঠলো। ওর আঙুল কেটে রক্ত পড়তে লাগলো।
ঘটনার আকস্মিকতায় সবাই হতবাক। রোকেয়া বেগমের আত্মিয়ের ছেলেকে অযথা এভাবে ব্যথা দেয়ার জন্য তিনি বিরক্ত হয়ে মানিকের গালে সজোরে একটা চড় বসিয়ে দিলেন। মানিক কেঁদে উঠে দৌড়ে ঘরের ভিতরে চলে গেল।
মানিককে কখনো এভাবে মারেন না রোকেয়া বেগম। ওর বুকটা ব্যথায় মোচড় দিয়ে উঠলো। জলে দুচোখ ভরে গেল ওর।
মানিক ঘরের কোনে মুখ লুকিয়ে দাড়িয়ে আছে। রোকেয়া বেগম নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না। ওকে জড়িয়ে ধরে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে লাগলেন।
-তুমি আমার মা না কেন। ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বললো মানিক। মানিকের এই প্রশ্নের কোন জবাব দিতে পারলেন না রোকেয়া বেগম। অসহায়ের মত ওকে জড়িয়ে ধরে নিজেও কাঁদতে লাগলেন তিনি।
হায়রে নিয়তি! বিধাতাই ওকে জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসটি থেকে শুরূতেই বঞ্চিত করেছে। তায়তো এই অবুঝ অবোধ হাতের নাগালে যা খড় কুটো পায় তার সবটুকুই যক্ষের ধনের মত আকড়ে মনের জ্বালা নিবারন করতে চায়।
অনাদরে লালিত শিশুরা এমনি ভাবেই বড় হয়ে তাদের নিজ নিজ মনের গভীরে আঁকা রং মাখানো চশমা দিয়েই পৃথিবীটাকে দেখে। কোন দরদী জন সময় মত যদি চশমাটা চোখ থেকে খুলতে সাহায্য না করে তাহলে পৃথিবীটাকে ঐ একপেশো দৃষ্টিতে দেখতে দেখতেই ওদেরকে বিদায় নিতে হয়।
জিদটা বোধহয় ভালো এবং খারাপ দুধরনের হয়। এটা যদি সময় কাল পাত্র মিলিয়ে ব্যবহৃত হয় তাহলে ভালো ফল পাওয়া যায়, আর যথেচ্ছ ভাবে ব্যবহ্নত হলে ফলটা উলটা হয়।
মানিকের ব্যপারটাতে বেধহয় বিধাতা হস্তক্ষেপ করলেন। ওর জিদটায় পরবর্তি জীবনে লেখাপড়া আর খেলাধুলার ব্যপারে ইতিবাচক ভাবে ব্যবহৃত হতে লাগলো।
I had a long career in Army. I was trained to follow orders, instructions and set rules, taking those as axiomatic. That strayed me a bit from free thinking as happens with all technology users. Basically I am a free thinker always and now in search of some basic truth in my own way. ([email protected]).
Just wish to say your article is as amazing. The clarity to your publish is just cool and that i can suppose you are a professional on this subject. Well along with your permission let me to seize your feed to keep up to date with forthcoming post. Thank you a million and please carry on the enjoyable work.
Good write-up, I’m normal visitor of one’s site, maintain up the nice operate, and It’s going to be a regular visitor for a lengthy time.
Nice post. I used to be checking constantly this blog and I’m impressed! Very useful info specially the final phase 🙂 I care for such information a lot. I used to be seeking this certain info for a very lengthy time. Thanks and good luck.
An interesting discussion is worth comment. I think that you should write more on this topic, it might not be a taboo subject but generally people are not enough to speak on such topics. To the next. Cheers
I always was concerned in this subject and still am, thanks for putting up.
Perfect work you have done, this web site is really cool with good info .