অমৃতের সন্ধানে -৩
এমনি এক বিকেলে মানিক ফুটবল খেলতে যাওয়ার জন্য তৈরী হচ্ছিলো। ওর অন্য কয়েকজন বন্ধু তৈরী হয়েই ওর রূমে ঢুকলো। মানিক তৈরী হয়ে এখনই নামবে জানিয়ে ওদেরকে মাঠে যেতে বললো।
ওরা চলে যেতেই কাদেরও রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
তিনতলা হোষ্টেল, নিচে নামার সিড়ির সাথে লাগোয়া একটা বারান্দা, কয়েকটা চেয়ারও পাতা আছে সেখানে। ওখান থেকে হেষ্টেলের পিছনে অবস্থিত ফুটবল ফিল্ডটা দেখা যায়। কাদের ওখানে গিয়ে বসলো।
আকাশে সেদিন মেঘের বেশ ঘনঘটা। যে কোন সময় বৃষ্টি শুরূ হতে পারে। বেশ কয়েকজন ছাত্র মিলে ফুটবল খেলছে।
নিচে নামার সময় মানিক নির্লিপ্তে একাকী বসে থাকা কাদেরকে দেখলো পিছন থেকে। একটা কাঠের চেয়ারে বসে তাকিয়ে আছে মাঠের দিকে। অন্য কেউ নেই আশেপাশে, কাদের একাকী বসে।
একটু দাড়ালো মানিক। ওভাবে একাকী বসে থাকা কাদেরকে ভারী অসহায় লাগলো ওর কাছে। ওতো যে কারো একজনের সাথে বসতে পারে। ভাবলো মানিক ওর দিকে তাকিয়ে।
এমনিই বোধহয় হয়। প্রকৃতই সব মানুষ পূর্ণ মনুষ্যত্ব নিয়ে জন্ম গ্রহন করে, কিন্তু জন্ম রহস্য তার মধ্যে পাশবিক প্রবৃত্তিগুলো সুপ্ত রাখে। প্রতিটি মানুষের মনুষ্যত্বের প্রকাশ স্বতঃস্ফূর্ত। কিন্তু পাশবিক প্রবৃত্তিগুলোর জন্ম নিতে হয়, আর সেগুলো ঘটে জীবন চলার বাকে বাকে বিভিন্ন ঘটনা বা পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে।
মানুষের পাশবিক প্রবৃত্তিগুলো হিংস্র শিকারী পশুর আচরণের সাথে তুলনা করা যায়। শিকার যদি আত্মরক্ষা বা শিকারিকে প্রতিহত করার প্রয়াস পায় তাহলে শিকারী পশু অধিকতর ক্ষিপ্র হয়ে ওঠে। কিন্তু শিকার যদি মৃত বা মৃতপ্রায় হয় তাহলে শিকারি পশুর হিংস্রতা যেন লোপ পায়।
-সব কিছুই বিনা প্রতিবাদে কেমন যেন মেনে নেয় কাদের। ওর জন্মগত বিভিন্ন ক্রটি নিয়ে ওদের সব কটাক্ষকেই নীরবে মেনে নেয় বেচারা। রূমে ওর সমান অধিকার থাকা সত্বেও মানিকের অনাচারেরও কোন প্রতিবাদ করে না।
ক্ষনেকের জন্য একটা অপরাধবোধ দেখা দিল মানিকের মনে।
মানিক দাড়িয়ে অসহায়ের মত বসে থাকা কাদেরকে দেখলো কিছুক্ষন। আকাশে মেঘ ডাকলো গুড়ু গুড়ু করে। সে শব্দে সম্বিৎ ফিরে পেয়ে ধীর পায়ে নেমে গেল মানিক।
মানিক খেলতে খেলতে আড় চোখে মাঝে মাঝে দেখছিলো কাদেরকে। ওদের দিকেই তাকিয়ে আছে কাদের। কিন্তু ও যেন ভাবছে অন্য কিছু। মনে হলো মানিকের।
ওকে ওভাবে বসে থাকতে দেখে ভারী মায়া লাগলো মানিকের ওর জন্য।
বৃষ্টি নামলো হটাৎ করে। সবাই খেলা বন্দ করতে চায়লো। কিন্তু মানিকের খুব ভালো লাগছিলো খেলতে। আর ওর জোরাজোরিতেই ওরা খেললো বৃষ্টিতে ভিজে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
ছোট কাল থেকেই মানিকের এ্যজমার সমস্যা আছে। ঠান্ডা লাগলে তা বেড়ে যায়। তা জানা থাকা সত্বেও মানিক ভিজলো বৃষ্টিতে।
রূমে ফিরে দেখে কাদের ফেরেনি তখনো। মানিক ভেজা কাপড় গুলো পাল্টিয়ে নিল। অন্য দিনে কাপড়গুলো বাথরূমে যেমনি তেমনি ফেলে রাখে। কিন্তু আজ কাদেরের কথা চিন্তা করে ওগুলো ধুয়ে বারান্দায় ঝুলানো তারে মেলে দিল। নিজের অগোছানো কাপড়গুলো গুছিয়ে রাখলো একটু।
শরীরটা খারাপ লাগায় কম্বল গায়ে টেনে শুয়ে পড়লো মানিক।
কাদের ফিরলো সন্ধ্যা বেশ একটু গড়িয়ে গেলে। রূম অন্ধকার দেখে পা টিপে টিপে ঢুকলো।
বুঝলো মানিক শুয়ে আছে। এ সময় ওর শুয়ে থাকার কথা না। একটু খটকা লাগলো ওর। কিন্তু ও জানে মানিক খামখেয়ালী। এটা ওর কোন খেয়ালীপনা ভেবে কাদের প্রয়োজনীয় দুএকটা বই নিয়ে নিঃশব্দে বেরিয়ে গেল।
একেবারে রাতের খাবার খেয়ে ফিরতে রাত প্রায় ষাড়ে দশটা বাজলো কাদেরের।
দেখল মানিক শুয়ে আছে ওভাবেই।
-ক্লান্ত তায় হয়তো ঘুমাচ্ছে। ভাবলো কাদের।
কাদের নিঃশব্দে শুয়ে পড়লো। টিপ টিপ করে বৃষ্টি পড়ছেই। বেশ ঠান্ডা। কাঁথাটা টেনে শুতে শুতেই ঘুমিয়ে পড়লো কাদের।
একটা গোঙরানির শব্দে ঘুম ভাঙলো কাদেরের।
হটাৎ করে ঘুম ভেঙে ঠিক আচ করতে চেষ্টা করলো শব্দটা কিসের। নিস্তব্দ সব কিছু। একটু বাদে আবার একই শব্দ। বুঝলো মানিক শব্দ করছে।
-একি! মনে হচ্ছে মানিকের দম নিতে কষ্ট হচ্ছে।
-মানিক কি ঘুমের মধ্যে এমন করছে? কি করবে এখন ও!
ও ভাবেই শব্দ করে চলেছে মানিক।
-কাদের আমার দম বন্দ হয়ে যাচ্ছে। ইনহেলারটাও শেষ হয়ে গেছে।
-একি মানিক ওকে ডাকছে অসহায়ের মত! এ যে অবিশ্বাস্য।
প্রায় লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে কাদের ওর কাছে গেল।
লাইটটা জ্বালালো তাড়াতাড়ি। মানিকের চোখ দুটো লাল টকটকে, মুখটা হা করে নিঃশ্বাস নেয়ার চেষ্টা করছে। মনে হচ্ছে যে কোন সময় ওর দমটা বন্দ হয়ে যাবে।
ঘড়িতে দেখল রাত তিনটে বাজে। কি করবে এত রাতে?
মনে পড়লো ওদের হোষ্টেল থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটা ক্লিনিক আছে। সারা রাত খোলা থাকে।
ওখানেই মানিককে নিয়ে যাওয়ার মনস্ত করলো। ভাগ্য ভালো হলে রাস্তায় হয়তো রিকশা পাওয়া যাবে। ভাবলো কাদের।
ওর গায়ের শক্তিটা কাজে লাগলো এখন। মানিককে দাড় করিয়ে ওর হাতটা নিজের কাধের উপর ভর করিয়ে অনেকটা উচু করেই কাদের ওকে নিয়ে সিড়ি দিয়ে নেমে আসলো।
চারিদিক নিস্তব্দ নিথর। শুধু স্ট্রিট লাইটগুলো বোকার মতো তাকিয়ে আছে। ততোক্ষণে বৃষ্টি থেমে আকাশের মেঘও ফিকে হয়ে এসেছে। সেই ফাক দিয়ে দিয়ে তারা গুলো উকি ঝুকি মারছে।
গেটের দারোয়ান টুলে বসে। ওর সাহায্য নিয়েই মানিককে সে রাতে ক্লিনিকে নিয়ে গেল কাদের। সারাক্ষন কাদেরের মনে হচ্ছিল এই বোধহয় দমটা বন্দ হয়ে যাবে মানিকের।
সে রাতে কাদের না থাকলে কি ঘটতো মানিকের কপালে তা সঠিক করে বলা যায় না।
এ ঘটনার পর থেকে কাউকে বা কোন কিছুকেই খাট করে দেখে না মানিক। আর ওর মনের ভিতর এক দৃঢ় ধারণা জন্মাল যে, সব কিছুর পিছনেই অজানা শক্তির প্রচ্ছন্ন একটা হাত কাজ করে।
মানিক বিশ্বাস করে এ প্রথিবীতে যা কিছু ঘটছে তার সব কিছু ঠিক আছে। কোথাও কোন সমস্যা নেই। সবই পূর্বনির্ধারিত হিসাবেই চলছে এর কোন হের ফের নেই।
বিধাতার এ বিধান খোলা মনে মেনে নিয়ে জীবনের পথে এগিয়ে গেলে বিধাতা তা পছন্দ করে বলে মানিকের বিশ্বাস।
কোন আশা ভঙ্গের জন্য কম বেশী কষ্ট হয় মানিকের অন্য সবার মত, কিন্তু ওতো নিরূপায়। আশা ভঙ্গের কষ্টের চেয়ে বড় কষ্টটা ওর অন্য জায়গাই- কষ্টের কথাগুলো শোনার মত দরদীর অভাব ওর জীবনে। শুধু কষ্ট কেন হাসি বা কান্না কোনটার ভাগ নেয়ার মত কোন দরদী ওর জীবনে বিরল।
না পাওয়ার ঘটনা ওর জীবনে এত নৈমিত্তিক যে না পাওয়াটা ওকে আর অবাক করতে পারে না। আশা ভঙ্গ হতে হতে আকাংখা করার স্পৃহাটাও আজকাল কমে গেছে ওর।
চলতি পথে পথই ওর সাথী।
একটা বিষয়ে মানিকের বিশ্বাসটা খুবই দৃঢ়। -ও মনে প্রাণে বিশ্বাস করে যে একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের সাহায্য বা ক্ষতি কোনটাই করার কোন ক্ষমতা নেই। এ ব্যপারে একচ্ছত্র অধিকার শুধু তাঁর যিনি সৃষ্টি করেছেন। বিধাতা তাঁর নিজস্ব হিসাব অনুযায়ী সময় হলেই তাঁর হাতটা বাড়িয়ে দেয় কারো মাধ্যমে।
ওর আশেপশের জানাশোনা মানূষ গুলোর সুখ দুঃখগুলো ভাগ করে নেয়ার মত কেউ না কেউ সবার আছে। বিপদের বা সুখের দিনে পাশে এসে হাতটা ধরার মত সবারই কেউ না কেউ থাকে।
কিন্তু ওর ব্যাপারটা একদম যেন ব্যতিক্রম।
I had a long career in Army. I was trained to follow orders, instructions and set rules, taking those as axiomatic. That strayed me a bit from free thinking as happens with all technology users. Basically I am a free thinker always and now in search of some basic truth in my own way. ([email protected]).
I besides think thus, perfectly composed post! .
My partner and I absolutely love your blog and find most of your post’s to be what precisely I’m looking for. can you offer guest writers to write content for you personally? I wouldn’t mind writing a post or elaborating on most of the subjects you write about here. Again, awesome blog!