অমৃতের সন্ধানে -২

 

বুকের বা পাশটা কিন কিন করে ব্যথা করেই চলেছে। আর একটা ট্যাবলেট খেতে পারলে বোধহয় ভালো হতো। কিন্তু এ অবস্থায় সিড়ি বেয়ে উপরে উঠা মানিকের পক্ষে কোন ভাবেই সম্ভব নয়।
-খোকা শরীরটা খারাপ করেছে নাকি!
মানিক সম্বিত ফিরে পেল ওর ডাকে।
চারিদিকে অন্ধকার, চশমাটাও চোখে নেই। ভালো করে ওকে দেখতে পেলো না মানিক। তবে গলার স্বরে বুঝলো খোদাবকস।
খোদাবকস এবাড়ীর পুরানো চাকর। ওর বয়স নিঃসন্দেহে আশি পার হয়েছে। খ্যাস খ্যাস করে কথা বলে। ছয় ফুটের মত লম্বা, ওর গায়ে মাংসের চেয়ে হাড্ডি বেশী। ছোট কাল থেকেই এবাড়ীতে। বাবা কোথা থেকে যেন এনেছিল ওকে। যতদুর জানি আপন বলে কেউ ওর নেই এ দুনিয়াতে।
বাড়ী সংলগ্ন গার্ডেনের কোনার দিকে একটা ঘরে থাকে ও। পাহারা দেয়, লন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে। এগুলোই ওর কাজ। থাকা খাওয়া কাপড় চোপড় দেয়া ছাড়াও মানিক মাসিক হারে বেতন ওকে।
বাড়ীতে কাজ না থাকলে সময় বুঝে অন্যের বাড়ীতেও কাজ করে ও। মানিকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে এ ব্যপারে।
অন্যের বাড়ীতে কাজ করার কি দরকার জিজ্ঞেস করেছিলো মানিক অনুমতি দেয়ার সময়।
-মানুষ জনের একটু আধটু সাহায্য করা আর কি। আর কাজ না থাকলি ভাল্লাাগে না খোকা।
কারো কোন কাজ করে দিলে তার জন্য বাড়তি টাকা নেয় না খোদাবকস। ও বলে এ গায়ের সবাই ওর আপন, তাছাড়া একা মানুষ খাওয়া পরার সমস্যা নেই টাকা দিয়ে কি করবে।
পিছন ফিরে তাকানোর মত কেউ নেই কিছু নেই ওর। আসামের কোন এক খানে বাড়ী বলে ও বলে। ভালো করে জানে না কিছুই নিজের সম্পর্কে। আর তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথাও নেই ওর। ছোট বয়সে কি ভাবে যেন এসেছিল এ অঞ্চলে। তারপর দিনে দিনে অনেকদিন হয়ে গেল।
কোথাও কেউ নেই ওর।
বাবা বেচে থাকতে ওকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজি হয়নি ও। বাবাকে ও কি একটা বলেছিল। পরে বাবাও এ নিয়ে আর কথা বলেনি। অনন্যারা জিজ্ঞেস করলে বলেছিল- খোদাই যা চায়নি তা নিয়ে জানতে হলেতো তাকেই জিজ্ঞেস করতে হয়।
ওর গায়ের রংটা এখানকার অন্যান্য সবার মত হলেও চোখে নাকে বোঝা যায় ও এখানকার কেউ না, অন্যখানের মানুষ।
ও যখন আনমনে বসে থাকে তখন ওকে বড্ড একাকী লাগে।
বাড়ীটা আকড়েই পড়ে থাকে ও। এটাকে দেখেশুনে রাখায় যেন ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ। বাড়ীটার প্রতি মানিকের আবেগ জড়ানো সম্পর্কটা ও বোঝে।

এ বাড়ীর অনেক কিছুরই সাক্ষী ওই খোদাবকস। এ বাড়ীটা বলতে গেলে ওই আগলে রেখেছে সকল প্রতিকুলতার মাঝে। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জীবন বাচাতে বাড়ী ছেড়ে সবাই চলে গেলেও খোদাবকস ছিল এই বাড়ীতে। কি মায়াই পড়ে ছিল তা কেউ জানে না।
হানাদার বাহিনীর সৈন্যরা ওকে অনেক অত্যচার করেছিল। যুদ্ধ শেষে ফিরে সবাই আমাদের শুণ্য ভিটেই বিনা হাতিয়ার আর বিনা ট্রেনিয়ে পাহারায়রত ওই যোদ্ধার পাক হানাদারদের অত্যাচারে ক্ষত বিক্ষত হাড্ডিসার দেহটা দেখে সবাই বলেছিলো ও বোধহয় বাচবে না।
খোদাবকস বেচে গেল ঠিকই কিন্তু সুস্থ হলো না। খুড়িয়ে হাটে তখন থেকেই, লাঠি ভর না দিয়ে চলতে পারে না। ওর শ্বাসনালীটাও চিকন হয়ে গিয়েছে। কোন কিছু গিলতে কষ্ট হয়। আর কথাও বলে খ্যাস খ্যাস করে।
বাবা ওকে খুবই ভালোবাসতেন। এ বাড়ী ছেড়ে একে একে সবাই চলে গেলেও খোদাবকস যায়নি। এ বাড়ীর উপর এ বাড়ীর সব মানুষের উপর ওর একটা অলিখিত অধিকার আছে। কিন্তু কোন কিছুর প্রতিই কোন লোভ নেই ওর। কোন চাহিদাও তেমন নেই ওর।
খুব একটা কথা বলে না কারো সাথে। শুধু চেয়ে চেয়ে দেখে কেবল।
কিসের টানে যে পড়ে আছে তা ও ছাড়া কেউ জানে না।
সব ছেড়ে মানিক যেদিন ফিরে এল পৈতৃক ভিটায়, খোদাবকস আনন্দের অতিশয্যে চোখ মুছতে মুছতে বলেছিলো- মরবার সময় হলিই সবাই আসে এখানে, তা তুমি কেন এলে ছোট খোকা।
ওর কথায় মানিক শুধু হেসেছিল সেদিন। পরে অবশ্ব্য হাসপাতালটা তৈরী করা দেখে খুব খুশি হয়েছিলো ও।

ও আসাতে ওকে দিয়ে ওপর থেকে ট্যাবলেটটা আনানোর কথা ভাবলো মানিক। ট্যাবলেট না খেলে বোধহয় ব্যথাটা যাবে না। কিন্তু ওর শরীরের যা অবস্থা তাতে কি করতে কি করে, তায় ভাবলো, থাক।
-নাহ ঠিক আছে তুমি যাও।
-আমি এদিকেই আছি, ডাক দিলেই পাবা।
খুক খুক করে কাসতে কাসতে ও চলে গেল।
চোখদুটো একটু খুলে সামনে তাকাতেই মানিক দেখলো অঝরে বৃষ্টি হচ্ছে। মাঠ ঘাট প্রান্তর সব পানিতে থৈ থৈ করছে। অবিরাম বর্ষন খাল বিল নালা মাঠ সবকিছুকেই একই সমতলে দাড় করিয়েছে।
মনে হচ্ছে সামনে অনেক বড় একটা নদী আর মানিক এপারে বসে। ওপারটা ঝাপসা যেন কুয়াসাচ্ছন্ন, কিছুই দেখা যাচ্ছে না। কেমন যেন স্বপ্নীল।
হাতের তালু দুটো মাথার পিছনে ভাজ করে তার উপর মাথাটা ঠেস দিয়ে ইজি চেয়ারটাতে শরীরটা পুরোপুরি এলিয়ে দিল।
এপারের যা কিছু তার কোনকিছুই ওকে কেন যেন তৃপ্তি দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তায়তো মনে হচ্ছে- আহ ওপারেই সব তৃপ্তি সব অমৃত। ওপারে যাওয়ার চিন্তায় মনটা কেন জানি ব্যকুল হয়ে উঠলো মানিকের।

সেদিন শুক্রবার, ছুটির দিন। হাসপাতালের ওদিকটা একেবারে নির্জন। পুরো রাত ধরেই বৃষ্টি, সকাল হতে না হতেই যেন আরো জাকিয়ে এসেছে।
হটাৎ একটা গাড়ীর শব্দে মানিক চোখ মেলে তাকালো। আবছা যা দেখা যাচ্ছে তাতে মনে হলো একটা সাদা মাইক্রোবাসের মত। বোধহয় এ্যমবুলেন্স। হাসপাতালের পোর্চের নিচে এসে দাড়ালো। বোধহয় কোন সিরিয়াছ রোগী আসলো।
এই বর্ষনের মধ্যেও কোন কিছু থেমে নেই। ভাবলো মানিক।
কেবল স্যাঁ স্যাঁ বর্ষনের শব্দ। চোখ দুটো বন্দ করলো মানিক।
হটাৎ মনে হলো আরো কয়েকজনের সাথে মানিক মাইক্রোবাসটাতে বসে।
ওরা সবাই ওপারের যাত্রী। সব ছেড়ে ওপাড়ে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত মানিক। এপারের জন্য কোন টান ওর মনে আর অবশিষ্ট নেই। সামনে বিশাল জলরাশি কুলকুল করে বয়ে চলেছে। অনেক পথ পাড়ি দিয়ে মাঠ ঘাট প্রান্তর পেরিয়ে এখন ও একদম কিনারে পৌছে গিয়েছে। শুধু নদীটা পার হতে পারলেই সব অপেক্ষার পালা শেষ।
ফেরীতে করে পার হতে হবে এ বিশাল নদীটা।
ঘাটে পৌচেছে ঠিকই কিন্তু বেলা বোধহয় বেশী বাকি নেই।
এখানে আসার রাস্তাটা সরূ আঁকাবাঁকা আর পিচ্ছিল। একটায় মাত্র রাস্তা সবার জন্য। তায় এ রাস্তা দিয়েই মানুষ পশু আর হরেক রকমের বাহন নিজ নিজ গতিতে নিজ নিজ গন্তব্যে চলমান।
মনে পড়ছে খুব বিরক্ত লেগেছিল কোন কোন সময়। মনে হয়েছিলো থেমে যাবে কোথাও। কিন্তু চলা থামালেইতো বেলা থেমে থাকবে না। তায় চলতেই হয়েছে গন্তব্যের টানে।
যাত্রি ওরা কয়েকজন। নদীটার পাড়ে ঠিকই পোৗছালো ওরা শেষমেষ, কিন্তু দেরী হয়ে গেল।
নিজ সময় সুচিতেই ছেড়ে চলে গেছে ফেরীটা কিছুক্ষন আগে। ততোক্ষনে ওটা প্রায় মাঝ দরিয়াই ঝাপসা দেখা যাচ্ছে। শব্দটা এখনও শোনা যাচ্ছে, ঘাটের পানি নড়ছে তখনো।
ওই একটাই ফেরী, ওটা ফিরলে তারপর যেতে হবে। কে জানে ফেরীটা কখন ফিরবে আবার।
ওর সাথের সবাই বিভিন্ন বয়সী কিন্তু উদ্দেশ্যে অভিন্ন।
অন্যান্য সবাই বিরক্তি প্রকাশ করলো গমনায়মান ফেরিটার দিকে তাকিয়ে। কেউ বা রাস্তা কেউ বা বাহন আবার কেউ বা সিষ্টেম ইত্যাদিকে দোষারোপ করে নিজ নিজ ভংগিতে আফসোচ করতে লাগলো সবাই।
কোন রকম প্রতিক্রিয়া দেখাল না কেবল মানিক।
মানিক কোন কিছু না পাওয়ার জন্য আফসোচ করে না। জীবন ওর মনে বিশ্বাস জন্মিয়েছে যে বিধাতার এ পৃথিবীতে সবই ঠিক আছে, সবই চলছে সঠিক ভাবে একটা বাধা নিয়মে। তায় কোন কিছু সম্পর্কেই কোন অভিযোগ নেই মানিকের।
ওর বিশ্বাস যে বিধাতা চায় মানুষ তাঁর সব বিধানকে মেনে নিক নীরবে বিনা বাক্যে। তাঁর সৃষ্টির কোন কিছুকেই কেউ অবহেলা না করূক। সৃষ্টির সব কিছুর সাথেই বিধাতার আলাদা আলাদা সম্পর্ক।
চিন্তার সাগরে ডুবে গেল মানিক।
মানিক তখন ক্লাস এইটে পড়ে। অভিযাত স্কুল সেখানে সব ধণী শ্রেণীর মানুষদের ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে। সবার মধ্যেই উন্নাসিক একটা মানষিকতা বিরাজ করে। অন্য সবার প্রতি এবং একে অন্যের প্রতিও। সকলের প্রচেষ্টাই যেন আড়ম্বরতা প্রদর্শন করে অপরকে তাচ্ছিল্ল্য করে নিজের শ্রেষ্টত্ব প্রমান করা।
বলা বাহুল্য মানিকও সেখানকার ছাত্র হিসাবে ওই একই দোষে দুষ্ট।
ওদের ক্লাসে একজন ছাত্র ছিল কালো লম্বা আর তোতলা। দেখতে কুৎসিতই বলা যায়, নাম কাদের।
কাদের নিজের নামটাও একবাক্যে উচ্চরণ করতে পারতো না বলতো কা-কাকাদের। কিন্তু ও ছিল অত্যাধিক মেধাবী এবং পরোপকারী। মেধার জোরে এবং চরিত্রের দৃঢ়তার আকর্ষনে ও ক্লাসের অন্যান্য সকলের এবং শিক্ষকদের দৃষ্টি আকর্ষন করতো সব সময়।
কেন জানি মানিক প্রথম থেকেই ওকে অবমুল্যায়ন করতো এবং অযথা ওকে সবাই বেশী গুরূত্ব দিচ্ছে বলে মনে হতো ওর। ক্লাসে কাদের কোন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলে বা প্রশ্নের উত্তর দিতে গেলে মানিক আর ওর দল মিলে টিপ্পনী কাটতো। নানা শব্দ করে বা কথা বলে ওকে হয়রানি করতো। মানিক আর ওর বন্ধুরা খুব প্রভাবশালী ছিল বিধায় শিক্ষকও ওদেরকে জোর করে কিছু বলতেন না।
কাদের রীতিমত ওকে ভয়ই পেত। ধীরে ধীরে এমন হল যে, ক্লাসে কোন কথা বলার আগে কাদের দেখে নিত মানিক ক্লাসে আছে কিনা, থাকলে আর কথা বলতো না।
কাদেরের সাথে মানিকের কোন বিষয় নিয়েই ঝগড়া ছিল না। সমস্যার মূল কারণ হচ্ছে কাদেরের প্রতি মানিকের একতরফা কিছু মনোভাব। মানিক ওর অবচেতন মনে কাদেরের চেহারাটাকে এখানকার পরিবেশের সাথে বেমানান মনে করতো। কাদেরের কথার ধরণ ওকে বিরক্ত করতো। আর সবকিছু মিলে ওর মেধাটা ওর মত একজন ছেলের প্রাপ্য নয় বলেও মানিকের মনে হতো।
ক্লাসে ভুল করেও যদি কাদের কখনো মানিকের আশে পাশে বসতো তখন প্রকৃতই মানিকের শরীরটা যেন ঘিন ঘিন করতো।
মানিক অদ্ভুত এক মানষিকতা পোষন করতো কাদেরের প্রতি।
স্কুলটা রেসিডেনসিয়াল। নতুন হোষ্টেল কমপ্লেক্র তৈরী হয়েছে। সব ছাত্রদের পুরনো হোষ্টেল বিল্ডিং ছেড়ে নতুন বিল্ডিংএ স্থানান্তর করা হবে। নতুন বিল্ডিংয়ে এক এক রূমে দুজন ছাত্র থাকবে। সেভাবেই সব ক্লাসের ক্যাপ্টেনের উপর ভার দেয়া হয়েছে জোড়া জোড়া করে নাম দেয়ার জন্য।
কিন্তু এই জোড়া তৈরী করার ব্যপারে ভীষণ মতানৈক্য দেখা দিল মানিকদের ক্লাসে। শেষে ক্লাস টিচার সিদ্ধান্ত নিলেন যে লটারীর মাধ্যমে জোড়া ঠিক করা হবে। সবার সন্মুখেই লটারী করা হবে আর লটারীতে ঠিক হওয়া নামের ব্যপারে কেউ কোন আপত্তি করতে পারবে না।
কপালের কি লিখন, লটারীতে কাদের আর মানিক রূমমেট নির্বাচিত হলো। ব্যপারটি ওদের দুজনেরই চিন্তার অতীত।
মানিক কেমন যেন হতভম্ব হয়ে গেল। কোন অনুভূতিই প্রকাশ করলো না। কাউকে কিছুই বললোও না। ক্লাস শেষে নিজ রূমে ফিরে গেল। বিকালেও বের হলো না কোথাও।
দেড়শো জন ছেলে সব কটি সেকশান মিলে, অর্থাৎ ও বাদে আরো একশো উনপঞ্চাশ জন ছাত্র আছে ওদের ক্লাসে। সবার নাম বাদ দিয়ে কাদেরের নামই উঠলো ওর ভাগ্যে। ভেবে কোন কুল কিনারা করতে পারলো না মানিক।
ভীষণ একটা বিতৃষ্ণা নিয়ে অনন্যপায়ের মত নতুন হোষ্টেলে ওর নির্ধারিত রূমে উঠলো।
দুটো বেডের মধ্য থেকে ওর ইচ্ছামত বেডটা বেছে নিল মানিক। ও সব কিছু গোজগাজ করার পর কাদের জড়োষড় হয়ে নিজের জিনিস পত্রগুলো নিঃশব্দে রূমের অন্য পাশটাতে উঠালো।
ভাবলো একবার মানিককে বলে – তুমি চায়লে আমাকে অন্য যে কোন রূমে দিতে পারো আমার কোন আপত্তি থাকবে না, কাউকে কিচ্ছু বলবোনা। কিন্তু সাহস হলো না বলতে।
সন্ধ্যার পর কাদের ওর টেবিল ল্যম্পটাটা পর্যন্ত জ্বালায় না মানিক ওরটা না জ্বালানো পর্যন্ত। আবার ও নিভিয়ে দেয়ার সাথে সাথে নিজেরটাও নিভিয়ে দেয়। নিজের বই পত্র বা জামা কাপড় গোজগাজ করতে অযথা শব্দ হবে ভেবে মানিক বাথরূমে বা কোন কাজে বাইরে গেলে সেই ফাকে ওগুলো করে নেয়।
মানিকও রূমের মধ্যে কাদেরের উপস্থিতিটিা দেখিয়ে দেখিয়ে অগ্রাহ্য করার জন্য অযথা শব্দ করে। চেয়ার টেবিল সশব্দে টান দেয় বা খাটে শুয়ে পাদুটো চেয়ারের উপর তুলে কাদেরের দিকে বাড়িয়ে দেয়। ইচ্ছামত শিষ দেয় গুন গুন করে গান গায়। মোটামুটি মানিকের আচরনে মনে হয় ঐ রুমে কাদেরের অস্তিত্ব ও ভুলেই গিয়েছে।
অন্যদিকে কাদের মানিকের উপস্থিতিতে কোনরকম কাজ বা নড়াচড়া করে না। ওর যা কাজকর্ম মানিক বাইরে গেলেই দ্রুত সেরে ফেলে।
মানিক ডানপিঠে স্বভাবের তায় অবসর সময়ে খেলাধুলা করে বা অন্য বন্ধুদের রূমে সময় কাটায়।
ওর অন্য বন্ধুরা মাঝে মাঝে ওর রূমে আসলে ওদের মধ্যে কেউ কেউ হয়তো কাদেরের সাথে দুএকটা কথা বলে। কিন্তু যেহেতু কাদের বোঝে যে মানিক তা পছন্দ করে না তায় ইচ্ছা করেই ওদের ডাকে কাদের যৎসামান্য জবাব দিয়েই হয়তো কখনো কখনো বাইরে বেরিয়ে বারান্দায় বা টিভি রূমে বই নিয়ে বসে একটু পড়াশোনা করার চেষ্টা করে।

Category: Bangla, Novel

Comment List

Your email address will not be published.