শান্ত ও সৌম্য ভাব বজায় রাখা  

 

(সংকলিত)

 

 

বিপদে পড়া একজন মানুষ তার তার জীবনের ভয়ঙ্কর কিন্তু শিক্ষণীয় অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিয়ে গল্পটা বলেছেন।

তিনি একটি লম্বা ভ্রমনে বিমানে ভ্রমন করছিলেন। বিমানের ভিতর প্রথম সতর্কবার্তাটি এলো যখন বিমানের সিট বেল্টের সাইনটি জ্বলতে শুরু করল -আপনাদের সিট বেল্টগুলি বেধে রাখুন।   

কিছুক্ষণ পর একটি শান্ত কণ্ঠস্বরে আর একটি সতর্ক বার্তা আসলো      –আমরা দুঃখিত যে এই মুহুর্তে কোন পানীয় পরিবেশন করতে পারবো না কারণ বিমাটি কিছুটা ঝড়ের মধ্যে পড়তে চলেছে তায় আমাদের চলাটা কিছুটা অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। আপনারা সিট বেল্টটি বেধে রাখুন।

যাত্রীটি জাহাজের ভিতর আশেপাশে তাকিয়ে দেখলেন যে অনেক যাত্রীদের চোখে মুখে আতঙ্কের ভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে। তখনি আবার ঘোষণা আসলো -আমরা এই মুহুর্তে আপনাদেরকে খাবার পরিবেশন করতে পারছিনা বলে অত্যন্ত দুঃখিত। ঝড়টি এখনো আমাদের সামনেই আছে।

এর পর পরই ঝড়টি আঘাত হানল। ঝড়ের ভয়ংকর গর্জন জাহাজটির ইঞ্জিনের আওয়াজকেও ছাপিয়ে গেল। বাইরে বজ্র বিদ্যুতের চমক অন্ধকারময় আকাশকে আলোকিত করতে লাগলো এবং মনে হতে লাগলো যে জাহাজটি একটি মহা সমুদ্রের দেউয়ের মধ্যে একটি হাল্কা সোলার মত উলট পালট খাচ্ছে। প্রতি মুহুর্তে বিমানটি ঝড়ের ভয়াবহ স্রোতে ধাক্কা খেয়ে অনেক উপরে উঠছে আবার সেটি আবার ধাক্কা খেয়ে অনেক নিচে নেমে আসছে। প্রতি মুহূর্তে মনে হতে লাগলো যে বিমানটি ক্র্যাশ করতে চলেছে।  

লোকটি তার নিজের ভয় এবং অস্বস্তি তার চারপাশের অন্যান্য যাত্রীদের সাথে ভাগ করে নিচ্ছিলেন। লোকটি বর্ণনা করলেন যে -আমি যখন জাহাজের ভিতর চারপাশে তাকালাম তখন দেখতে পেলাম যে প্রায় সমস্ত যাত্রী বিচলিত ও শঙ্কিত হয়ে আছে। তাদের কেউ কেউ প্রার্থনাও করছিলো।

লোকটির কাছে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত এবং অশুভ বলে মনে হচ্ছিলো  এবং তার মনে সন্দেহ হল যে বিমানটি হয়তো ঝড় থেকে বাচতে পারবে না।

তারপরে, হঠাৎ করে বিমানের ভিতর অদূরে বসা একটি ছোট মেয়ের প্রতি নজর পড়লো। তাকে দেখে মনে হল ঝড় যেন তার উপর কোন প্রভাব ফেলতে পারেনি। মেয়েটি পা দুটো গুটিয়ে তার সিটে বসে একটি বই পড়ায় মগ্ন ছিল।

মনে হল ঝড়ের কবলে পতিত বিমানটির ভিতর আর বাইরে যা ঘটছে  তার কিছুই মেয়েটির ছোট্ট পৃথিবীতে কোন প্রভাব ফেলতে পারিনি। মাঝে মাঝে সে চোখদুটো একটু বন্ধ করে নিচ্ছে তার পর আবার বই পড়াই মনোনিবেশ করছে এবং মাঝে মাঝে কেবল পা দুটো একটু সোজা করে আড়ামড়া ভাঙছিল। কিন্তু তার ভিতর কোন উদ্বেগ বা ভয় পরিলক্ষিত হচ্ছিলো না। বিমানটি যখন ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়ে দারুন ভাবে এদিক ওদিক দুলছিল আর হটাৎ করে অনেক উঁচুতে উঠে আবার ভয়ানক গতিতে নিচে নামছিল এ অবস্থাই যখন সমস্ত প্রাপ্তবয়স্করা যে কোন সময় বিমানটি ভেঙ্গে পড়ে মৃত্যু হতে পারে সে ভয়ে ভীত হয়ে পড়ছিল সে পরিস্থিতিতে সেই মেয়েটি সম্পূর্ণরূপে পুরোপুরি আশ্বস্ত অবস্থাই বসে নিজের কাজে ব্যস্ত ছিল।    

লোকটি যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিল না।

যাহোক, বিপদ  কাটিয়ে বিমানটি অবশেষে এয়ারপোর্টে নামলো এবং সমস্ত যাত্রী একজন আরেক জনের আগে অবতরণ করার জন্য তড়িঘড়ি করছিল, তখন লোকটি সবার পিছে পড়ে যে মেয়েটিকে এতক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছিলেন তার সাথে কথা বলার জন্য মনঃস্থির করলেন।  

দুর্ঘটনায় পড়া বিমানের বিপদ সম্পর্কে উল্লেখ করে তিনি বিপদের পুরো সময়টাতে মেয়েটির উদ্বেগহীন আচরনের কারন জিজ্ঞাসা করলেন।

-স্যার, আমার বাবা হলেন এই বিমানটির চালক আর তিনি আমাকে বাড়িতে নিয়ে যাচ্ছেন। স্মিত হেসে ছোট মেয়েটি জবাব দিল।   

 

শিক্ষণীয়ঃ আপনি যখন পরিস্থিতি সম্পর্কে নিশ্চিত থাকেন তখন আপনার আত্মবিশ্বাসের মাত্রা স্থির থাকে এবং আপনি কখনই অনিশ্চয়তায় ভোগেন না, আপনি শান্ত ও সৌম্য ভাব বজায় রেখে সফলতার সাথে কাজ শেষ করতে সামর্থ্য হন।

Source; Google

Category: Bangla, Moral Stories

Comment List

Your email address will not be published.