মাতাল চালকের কর্মফল –মা ও বোনের প্রতি ভায়ের অনন্য ভালবাসা    

(সংকলিত)

 

 

আমি একদিন একটি সুপার স্টোরে কেনা কাটার সময় লক্ষ করলাম যে স্টোরের ক্যাশিয়ার ৫ বা ৬ বছর বয়েসের একটি ছোট ছেলেকে কিছু টাকা ফেরত দিচ্ছে    

ক্যাশিয়ার বলছিল -আমি দুঃখিত বাবা, তোমার কাছে এই পুতুলটি কেনার মতো যথেষ্ট অর্থ নেই। ছোট ছেলেটি তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন বৃদ্ধ মহিলার দিকে তাকিয়ে বলল -দাদু তুমি কি নিশ্চিত যে পুতুলটি কেনার মত আমার কাছে পর্যাপ্ত টাকা নেই?    

বৃদ্ধা জবাব দিলেন -তুমিত জান সোনা যে তোমার কাছে এই পুতুলটি কেনার মতো টাকা নেইবৃদ্ধা তার চারপাশে কি একটা যেন খুঁজলেন তারপর ছোট ছেলেটিকে ৫ মিনিটের জন্য সেখানে  দাড়াতে বলে তাড়াহুড়ো করে চলে গেলেন

ছোট্ট ছেলেটি পুতুলটি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো    

সব কিছু অবলোকন করে আমি হেটে ছেলেটির কাছে গেলাম এবং তাকে জিজ্ঞাসা করলাম –বাবা, তুমি এই পুতুলটি কাকে দিতে চাও?

পুতুলটি আমি আমার ছোট বোনকে দিতে চায়, সে এ ধরনের পুতুল খুব পছন্দ করে এবং ক্রিসমাসের সময় সে পুতুলটি চেয়েছিল এবং সে নিশ্চিত ছিল যে সান্তা ক্লজ তাকে এটা ক্রিস্টমাস গিফট হিসাবে এনে দেবে।  

আমি তাকে আশ্বস্ত করলাম যে -তুমি চিন্তা করো না সান্তা ক্লজ নিশ্চয়ই পুতুলটিকে তার জন্য নিয়ে আসবে।

আমার কথা শুনে ছেলেটি ভারাক্রান্ত হৃদয়ে বলল -না, সেটা সম্ভব না কারন এখন আমার বোন যেখানে আছে সান্তা ক্লজ পুতুলটি সেখানে পৌছাতে পারবে না। আমাকে পুতুলটি আমার মায়ের কাছে দিতে হবে যাতে তিনি সেখানে যাওয়ার পর সেটি আমার বোনকে দিতে পারে।  

-আমার বোন ঈশ্বরের কাছে থাকার জন্য চলে গেছে। বাবা বলেছেন আমার মাও খুব শীঘ্রই ঈশ্বরের কাছে যাবে তাই আমি ভাবছি যে পুতুলটি আমার বোনকে দেওয়ার জন্য আমার মা সাথে নিয়ে যেতে পারবে। কথা বলতে বলতে ছোট ছেলেটির চোখ দুটো অশ্রু সজল হয়ে উঠলো।  

কথাগুলো শুনে আমার হৃদকম্পন প্রায় বন্ধ হয়ে গেল।

ছোট্ট ছেলেটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল -আমি বাবাকে বলেছি মাকে এখনি যেতে দিও না। আমি দোকান থেকে ফিরে না আসা পর্যন্ত তাকে অপেক্ষা করতে বল।

ছেলেটি তখন আমাকে তাঁর নিজের খুব সুন্দর হাস্যোজ্জল একটি ছবি দেখিয়ে বলল -আমি চাই মা যাওয়ার সময় সাথে করে আমার এই ছবিটি নিয়ে যাক যাতে সে আমাকে ভুলে না যায়।  

-আমি আমার মাকে খুব ভালবাসি এবং আমি চায় যে সে আমাকে ছেড়ে চলে না যাক, কিন্তু বাবা বলেছে যে কোন উপায় নেই মাকে আমার বোনের সাথে থাকার জন্য যেতেই হবে।  

কথা শেষ করে ছেলেটি খুব নিঃশব্দে করুন দৃষ্টিতে হাতে ধরা পুতুলটির দিকে তাকাল। আমি আমার মানিব্যাগ থেকে কিছু টাকা ওর অলক্ষে ছেলেটির পকেটে ঢুকিয়ে দিলাম।

-সোনা, তুমি কি আর একবার ভাল ভাবে তোমার পকেটটি পরীক্ষা করে দেখবে যে পুতুলটি কেনার মত পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা আছে কিনা?

-ঠিক আছে। কথাটি বলে ছোট ছেলেটি আমার মুখের দিকে তাকাল।

পুতুলটি কেনার জন্য যে টাকার প্রয়োজন তার থেকেও কিছু অতিরিক্ত অর্থ ছেলেটি তার পকেটে দেখতে পেল।

-ঈশ্বরকে ধন্যবাদ, আমাকে পর্যাপ্ত অর্থ দেয়ার জন্য। ছেলেটি স্বগত স্বরে কথাগুলো উচ্চরন করলো।     

-গত রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় আমি ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা করেছিলাম তিনি যেন পুতুলটি কেনার জন্য আমাকে পর্যাপ্ত অর্থ দেন যাতে করে পুতুলটি কিনে মায়ের হাতে দিতে পারি আর তিনি যেন সেটি আমার বোনকে পৌঁছে দিতে পারে। তিনি আমার প্রার্থনা শুনেছেন!   

-আমার মায়ের সাদা গোলাপ খুব পছন্দ কিন্তু পুতুল কেনার জন্য টাকা চাওয়ার পর আবার  ঈশ্বরের কাছে ফুল কেনার টাকা চায়তে সাহস হয়নি। তবে আমি ঈশ্বরের কাছে বিশেষ কৃতজ্ঞ যে তিনি আমাকে পুতুলের সাথে একটি সাদা গোলাপ কেনার জন্য যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ দিয়েছেন।

কয়েক মিনিট পর বৃদ্ধা ফিরে আসলেন এবং আমি অল্প কিছু দ্রব্যাদি ক্রয় করে আমার ঝুড়ি নিয়ে  বের হয়ে গেলাম। কিন্তু আমি কোনক্রমেই ছোট ছেলেটিকে আমার মন থেকে সরাতে পারলাম না।

হটাৎ করে দুদিন আগে একটি স্থানীয় সংবাদ পত্রের আর্টিকেলের কথা মনে পড়ে গেল, যেখানে একটি মাতাল ট্র্যাক ড্রাইভার একটি মহিলা এবং একটি ছোট্ট মেয়েকে বহনকারী কারকে আঘাত করেছিলেন।

ছোট মেয়েটি অবিলম্বে মারা যায় এবং মা গুরুতর অবস্থায় বেচে যায়। তাকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। ডাক্তার জবাব দিয়েছিল যে রোগীকে কোমা থেকে ফেরানো অসম্ভব তায় পরিবারকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে কখন তার জীবন রক্ষাকারী মেশিনের প্লাগটি খুলে দিতে হবে।  

-এই ছোট ছেলেটি কি ওই পরিবারের ছিল!   

ছেলেটির সাথে সাক্ষাতের দুই দিন পর আমি নিউজ পেপারে পড়লাম যে ওই মহিলাটি মারা গেছে।

আমি একগুচ্ছ সাদা গোলাপ কিনে ওই মহিলার জানাজায় শরিক হতে গেলাম।

দেখলাম কফিনের ভিতর শায়ীত মহিলার হাতে ধরা সাদা গোলাপ এবং বুকের উপর সেই ছোট্ট ছেলের হাস্যোজ্জল ছবি আর সেই পুতুলটি।

আমি অশ্রু ভরা চোখে ফিরে আসলাম। সেদিন থেকে আমার জীবনটা পুরোপুরি বদলে গেল।  

মা আর বোনের জন্য ছোট্ট ছেলেটির যে গভীর ভালবাসা আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম তা আজও আমার কাছে কল্পনাতীত।  

-এক সেকেন্ডেরও কম সময়ের মধ্যে এক মাতাল চালক ছোট্ট নিষ্পাপ ছেলেটির জীবন থেকে সব কিছু কেড়ে নিল! বুক খালি করে একটা নিঃশ্বাস বেরিয়ে গেল।  

Source: Google

Category: Bangla, Moral Stories

Comment List

Your email address will not be published.