নিভে যাওয়া মোমবাতি

(সংকলিত)

 

একজন লোকের অতি আদরের একটি ছোট মেয়ে ছিল সত্যি বলতে মেয়েটিই লোকটি বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন ছিলমেয়েটি একবার অসুস্থ হয়ে পড়লো এবং তার বাবা তার সাধ্যের মধ্যে সম্ভাব্য সব সেরা চিকিত্সকদের শরণাপন্ন হলেন।

কিন্তু সব প্রচেষ্টাই হার মানলো। মেয়েকে হারিয়ে বাবা এতই শোকাগ্রস্থ হয়ে পড়লেন যে, তিনি তার নিজের উপর থেকে পুরোপুরি ভাবে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে পাগলের মত আচরন করতে লাগলেন    

লোকটি কিছুতেই বাস্তবতা মেনে নিতে পারলেন না এবং নিজেকে তাসমস্ত বন্ধু বান্ধব আত্মীয় স্বজনদের বিচ্ছিন্ন করে সাংসারিক সব কাজকর্ম থেকে বিরত থাকলেন। তিনি কোনক্রমেই স্বাভাবিক জীবনে ফেরত আসতে ব্যার্থ হলেন।

এমনি পরিস্থিতিতিতে লোকটি এক রাতে একটি ব্যতিক্রমী স্বপ্ন দেখলেন। স্বপ্নে তিনি দেখলেন যে, তিনি স্বর্গে আছেন এবং ছোট ছোট শিশু ফেরেশ্তাদের একটি দুর্দান্ত সম্মেলন অনুষ্ঠান প্রত্যক্ষ করছেন। ছোট ছোট শিশু ফেরেশতাদের বিশাল দল একটি শ্বেত শুভ্র সিংহাসনকে লক্ষ্য করে মার্চ করছে।  

শ্বেত শুভ্র পোশাকে আবৃত প্রতিটি শিশু ফেরেস্তারা একটি করে জ্বলন্ত মোমবাতি বহন করছে। কিন্তু তিনি লক্ষ্য করলেন যে, একটি   মাত্র শিশু ফেরেস্তার বহনকৃত মোমবাতি জ্বলছিল না। তিনি  শিশুটিকে একটু গভীর ভাবে খেয়াল করে দেখলেন যে নিভে যাওয়া মোমবাতি বহন করা শিশুটি তার নিজের ছোট মেয়ে।

বাবা দৌড়ে তার শিশু মেয়ের কাছে গিয়ে তার হাত ধরে তাকে থামালেন এবং আদর করে জিজ্ঞাসা করলেন -মা তোমার  মোমবাতিটি জ্বলছে না কেন?

-বাবা, মোমবাতিটি বার বার নিভে যাচ্ছে এবং নিভে গেলেই তারা  আবার এটিকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে কিন্তু বাবা তোমার চোখের জল  সেটিকে আবার নিভিয়ে দিচ্ছে। শিশুটি তার বাবার প্রশ্নের উত্তরে বললো।  

এটি প্রত্যক্ষ করার পর পরই লোকটি তার স্বপ্ন থেকে জেগে উঠল।  

স্বপ্ন থেকে জেগে উঠে তিনি তাত্ক্ষণিক ভাবে এর অর্থ বুঝতে  পারলেন।

সেদিন থেকেই তিনি বাস্তবতা মেনে নিলেন। তিনি তার বন্ধুবান্ধব এবং সহযোগীদের সাথে নির্দ্বিধায় এবং প্রফুল্লচিত্তে সামাজিক যোগাযোগ আগের মতই শুরু করলেন। তিনি বাস্তবতা মেনে নিয়ে আর ঠিক করলেন যেন তার চোখের জলে যেন তার শিশু কন্যার মোমবাতিটি নিভে না যায়।

শিক্ষণীয়ঃ বিধাতার বিধান মেনে নিলেই তাঁর করুনা পাওয়া যায়।   

Category: Meaning of Life, Posts

Comment List

Your email address will not be published.