বন্ধুত্ব করার সময় যাচাই করা জরুরী

(সংকলিত)

 

 

আফ্রিকার দেশ বোতসোয়ানার ঘন জঙ্গলে অনেক আগে উইলস নামে একটি সিংহ বাস করত। তাঁর অনুগত চাকররা ছিলেন চিতা, শিয়াল এবং কাক।

কাকটি উড়তে উড়তে একদিন তাদের আস্তানার দিকে আসা একটি অদ্ভুত প্রাণীটিকে লক্ষ্য করল। সে দ্রুত ফিরে এসে তার বন্ধুদের কাছে বললো যে একটি অস্বাভাবিক প্রাণী এদিকে আসছে। তায় আমাদের সাবধান হওয়া উচিত।

সিংহ রেগে বললো -আমি জঙ্গলের রাজা,আমি কেন ভয় পাব?  চল আমরা এগিয়ে গিয়ে তাঁর সাথে দেখা করি।

তারা প্রাণীটিকে দেখে একটু অবাক হলো। প্রাণীটি দীর্ঘ শরীরের লম্বা লম্বা পা যুক্ত এবং তার পিঠে একটি বড় ফোঁড়যুক্ত জিনিস আছে।   -তুমি কে আর আমার জঙ্গলে কী করছো? সিংহ তাকে জিজ্ঞাসা করলো।

-আমার নাম তোডি আমি একটি উট। প্রাণীটি জবাব দিল। -আমি  একটি বাণিজ্য কাফেলার অংশ ছিলাম। রাস্তা হারিয়ে এখানে এসে পড়েছি, দয়া করে আমাকে আমাকে সাহায্য কর। 

দয়া বসত সিংহ তাকে তাদের সাথে থাকার অনুমতি দিল। কিন্তু তাতে অনন্যারা খুশি হল না তবে তারা নিরুপাই হয়ে সিংহের ইচ্ছাকে সম্মান করলো।

কিছুদিন কেটে গেল। একদিন জঙ্গলের একটি হাতির সাথে সিংহের  দুর্দান্ত লড়াই হল। তাতে সিংহটি মারাত্মকভাবে আহত হল আর শিকার ধরার জন্য খুব দুর্বল হয়ে পড়লো।

তাঁর চাকরেরা সিংহের জন্য শিকার ও খাবার সরবরাহ করতে খুব  অলসতা দেখাতে লাগলো। ধূর্ত শিয়াল কাকটিকে একপাশে নিয়ে বলল -বন্ধু, আমরা সিংহের খাবারের জন্য উটকে মেরে নিজেরা বাঁচি না কেন?

-নিঃসন্দেহে তোমার প্রস্তাবটি দুর্দান্ত তবে সেটা করবে কীভাবে?  কারন আমাদের প্রভু তাকে সুরক্ষা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন। কাক বলল।

উটটিকে হত্যা করার জন্য তারা একসাথে মিলে একটি গোপন  ষড়যন্ত্র করলো।

এমনি সময়ে একদিন চোখে অশ্রু নিয়ে তারা সিংহের কাছে গেল।  -হুজুর বনে কোন খাবার নেই, আর আপনার এ অবস্থা আমাদের  সহ্য হচ্ছে না। চতুর কাক বললো। -তবে আমি আপনাকে অনুরোধ করছি যে আমাকে হত্যা করে আপনি আপনার ক্ষুদা মিটান।

-না না, তা কি করে হয়, তোমার দেহ আমার হুজুরের ক্ষুধা মেটানোর পক্ষে খুব ছোট। শিয়াল তার আনুগত্য দেখিয়ে বলল।      -প্রয়োজনে প্রভুর খাবারের জন্য আমি আমাকে আত্মাহুতি দিব। প্রভুর জন্য এতটুকু আমিতো করতেই পারি।  

চিতাটি ওকে থামিয়ে দিয়ে বলল -হে প্রভু, আমি আমার বন্ধুদের  চেয়ে আকারে বড়, সুতরাং আপনার জীবন বাঁচাতে আপনি আমার জীবনটা নিয়ে নিন।

ওদের তিন বন্ধুর এই চাটুকারিতা উটটি নিঃশব্দে অবলোকন করছিলো। সে ভাবলো – সিংহকে খুশী করার জন্য তারও কিছু বলা দরকার। ওই তিনজন যেমন আকে অপরকে সহানুভূতি দেখালো উটটি তেমনি ভাবেই তার বন্ধুদের সহায়তার প্রত্যাশা করে বললো -আমার বন্ধুরা, তোমরা বহু বছর ধরে আমাদের প্রভুর সেবা করছো। প্রভুর পক্ষে তোমাদের একজনকে হত্যা করা কঠিন হবে। তায় আমি প্রভুর জন্য আমাকে উৎসর্গ করছি। প্রভু আপনার খাবারের জন্য আমাকে হত্যা করুন।

উটের কথা শেষ হতে না হতেই পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক ধূর্ত শিয়াল এবং চিতাবাঘ উটের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলল।

শিক্ষণীয়: ভেবে চিন্তে বন্ধুত্ব করা বুদ্ধিমানের কাজ।

Comment List

Your email address will not be published.