প্রার্থনার শক্তি খাটো করে দেখার অবকাস নেয়

(সংকলিত)

 

অতীব জীর্ণ পোশাক পরা একজন মাঝবয়সী মহিলা যার মুখের উপর জীবন যুদ্ধে পরাজয়ের ছাপ সুস্পষ্ট ভাবে প্রতিভাত ছিল সে  একটি মুদি দোকানে প্রবেশ করলো। মহিলাটি অত্যন্ত নম্রভাবে দোকানের মালিকের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো যে তার কিছু মুদি দ্রব্য সামগ্রীর খুব প্রয়োজন। সে অতীব বিনয়ের সাথে ব্যাখ্যা করেলো যে বর্তমানে  তার স্বামী খুব অসুস্থ এবং কাজ করতে অক্ষম, তাদের সাতটি বাচ্চা এবং তারা না খেয়ে আছে, তাই তাদের  খাবারের প্রয়োজন।

দোকানী মৃদু হেসে তাকে উপহাস করলো এবং মহিলাকে দোকান ছেড়ে চলে যেতে বললো।

পরিবারের প্রয়োজনের কথা ভেবে মহিলাটি পুনরায় আরো বিনীত  ভাবে দোকানীকে অনুরোধ করলো: -দয়া করে আমার প্রয়োজনীয় পণ্য গুলো আমাকে দিন, আমি যত তাড়াতাড়ি পারি আপনারা টাকা পরিশোধ করে দিব।

তিক্ত স্বরে দোকানী বললো –তার দোকান থেকে বাকীতে পণ্য দেয়ার কোন বিধান নেই।

বিক্রয় কাউন্টারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা একজন ক্রেতা সব  কথোপকথন শুনে এগিয়ে এসে দোকানীকে বললো –আচ্ছা ঠিক আছে মহিলাটির চাহিদা অনুযায়ী তার পরিবারের জন্য যা প্রয়োজন তা আপনি দিয়ে দিন মূল্য পরিশোধ করার দায়িত্ব আমি নিচ্ছি।

খুব অনিচ্ছুক কণ্ঠে মুদী মহিলাটিকে উদ্দেশ্য করে বললো –তুমি কি মুদি দ্রব্য ক্রয়ের তালিকা নিয়ে এসেছো?

-হ্যাঁ স্যার। মহিলাটি নিচু স্বরে উত্তর দিল।   

-ঠিক আছে। দোকানী বললো। -তোমার মুদি দ্রব্য ক্রয়ের তালিকাটি  আমার এই পাল্লার উপর রাখ, তালিকাটির যত টুকু ওজন হবে  আমি সে পরিমান পণ্য তোমাকে দেব। দোকানী তাচ্ছিল্য সহকারে বললো।

ভদ্রমহিলা মাথা নিচু করে এক মুহূর্তের জন্য কিছু একটা ভাবলো, তারপর তার পার্স থেকে একটি কাগজের টুকরো বের করে তাতে  কিছু লিখে মলিন মুখে কাগজের টুকরোটি সাবধানে মাথা নিচু করে পাল্লার উপর রাখলো।

শুধু মাত্র তালিকা লেখা কাগজের টুকরোর ভারে দাঁড়িপাল্লাটি নীচে নেমে গিয়ে সেখানেই আটকে থাকলো। এই অভাবনীয় ঘটনাটি অবলোকন করে দোকানী এবং ক্রেতা উভয়েই চোখ ছানাবড়া করে বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে রইলো।

অবাক হওয়া দোকানী পার্শে দন্ডায়মান ক্রেতার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বললো -আমি আমার চোখকে বিশ্বাস করতে পারছি না!  

ক্রেতাটি মৃদু হাসলো, মুদি দোকানী দাঁড়িপাল্লার অন্য পার্শে পণ্য গুলো রাখতে শুরু করলো।

কিন্তু দাঁড়িপাল্লাটি কোনক্রমেই ভারসাম্যপূর্ণ হল না আর দোকানী পাল্লার উপর আরও বেশি করে পণ্য সাজাতে লাগলো। পণ্য উপচে পড়লেও দাঁড়িপাল্লা ভারসাম্যপূর্ণ হলো না। দোকানী খুব বিরক্ত সহকারে ঘটনাটি দেখতে লাগলো।

অনন্যপায় হয়ে, দোকানী পাল্লা থেকে কাগজের টুকরোটি পরীক্ষা করার জন্য সেটি হাতে নিয়ে অবাক হয়ে দেখতে লাগলো।  

কাগজটিতে মুদির তালিকা ছিল না, সেখানে একটি প্রার্থনা ছিলো-প্রিয় প্রভু, তুমি আমার প্রয়োজনগুলি জানো এবং সেজন্যই আমি এটি তোমার হাতেই ছেড়ে দিলাম।

দোকানী সমস্ত পণ্য নিঃশব্দে মহিলাটিকে তুলে দিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।

ভদ্রমহিলা তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে পণ্যগুলো তুলে নিয়ে দোকান ছেড়ে চলে গেল।

দাড়িয়ে থাকা ক্রেতাটি একটি পাঁচশো-টাকার নোট দোকানীর হাতে  দিয়ে বললো -এর প্রতিটি পয়সা মূল্য অনেক।

ঘটনাটির ঘটার কিছু সময় পরে দোকানীটি আবিষ্কার করলো যে  তার ওজন করার ম্যসিনটি আসলে অকেজো হয়ে গেছে।

প্রার্থনার ওজন কতটা তা কেবল ঈশ্বরই জানেন!  

প্রার্থনার শক্তিটিকে কখনই খাটো করে দেখবেন না। সবার জন্য দিনটি শুভ হোক!

Category: Bangla, Moral Stories

Comment List

Your email address will not be published.