সামরিক জীবনের গল্প

 

(সংকলিত)

 

 

নার্স হাসপাতালে আসা একজন ক্লান্ত ও উদ্বিগ্ন  সৈনিককে তাড়াহুড়া করে বৃদ্ধ রোগীর বিছানার কাছে নিয়ে গেলেন।

-দেখ তোমার ছেলে এসেছে। নার্স তার কথা কয়েকবার পুনরাবৃত্তি করার পর বৃদ্ধ অতি কষ্টে ছোট্ট করে চোখ খুললেন।

তার হার্ট অ্যাটাকের ব্যথার কারণে উচ্চ মাত্রার ঘুমের ঔষধ  খাওয়ানোর দরুন বৃদ্ধ ঘুম ঘুম চোখে সৈনিকের  পোশাক পরিহিত একজন যুবককে আবছা আবছা অক্সিজেন ছিলিনডারের পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখতে পেল। বৃদ্ধ তার দুর্বল কম্পমান হাতটি  বাড়িয়ে দিলে সৈনিকটি তার শক্ত খসখসে হাত দিয়ে বৃদ্ধের দুর্বল কাপতে থাকা হাতটা জড়িয়ে ধরল। সৈনিকটি বৃদ্ধের দুর্বল হাতে মৃদু চাপ দিয়ে ভালবাসা ও উত্সাহের বার্তা প্রেরন করল।

নার্স একটি চেয়ার টেনে দিল যাতে সৈনিকটি রোগীর বিছানার পাশে বসতে পারে।

সারা রাত জুড়েই সৈনিকটি স্বল্প আলোকিত ওয়ার্ডে  বসে বৃদ্ধের হাত ধরে তাকে মৃদু ভাবে কথা বলে ভালবাসা এবং উৎসাহ যোগাল। গভীর রাতে নার্স বেশ কয়েক বার সৈনিকটিকে একটু বাইরে গিয়ে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়ার পরামর্শ দিল।

সৈনিকটি হাসিমুখে নার্সের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করল। নার্সের যাওয়া আসা, হাসপাতালের বিভিন্ন আওয়াজ বা হাসপাতালের রাতের কর্মীদের শুভেচ্ছা বিনিময়, হালকা রসিকতা বা রোগীদের যন্ত্রণাই কাতরানো ইত্যাদির কোন কিছুই তার কানে গেল না।

সৈনিকটিকে মাঝে মাঝেই রোগীকে নিচু কণ্ঠে কিছু কিছু কথা  বলতে শুনল নার্স। মৃত্যু পথযাত্রি বৃদ্ধ কিছু না বলে কেবলি সারা  রাত ধরে তার ছেলের হাতটা শক্ত করে ধরে রাখল।

ভোরের দিকে বৃদ্ধ মারা গেলেন। সৈনিকটি তখন তার প্রাণহীন  হাতটি ছেড়ে দিয়ে নার্সকে সংবাদটি জানাতে গেল। মৃত দেহটি জন্য নার্সটি তার করনীয় কাজ করতে বাস্ত হয়ে পড়লে সৈনিকটি অপেক্ষা করতে লাগলো।

কাজ শেষ করে নার্স ফিরে এসে সৈনিকটিকে বিভিন্ন সহানুভূতির কথা বলতে শুরু করলে সৈনিকটি তাকে থামিয়ে দিল।

-তিনি কে ছিলেন? সৈনিকটি জিজ্ঞাসা করলো।

নার্সটি হতবাক হয়ে উত্তর দিল -তিনি ছিলেন আপনার বাবা।

-না, তিনি আমার বাবা ছিলেন না। সৈনিকটি জবাব দিল।

-আমি জীবনে কখনও তাকে দেখিনি।

-তাহলে আমি আপনাকে তার কাছে নিয়ে যাওয়ার পরে কেন কিছু বলিনি? নার্স অবাক হল। 

-আমি তখনই বুজতে পেরেছিলাম যে আপনার বড় একটা ভুল হচ্ছে, তবে আমি এটাও জানতাম যে ঐ অবস্থাই মৃত্যু পথযাত্রী  বৃদ্ধের তার ছেলেকে কাছে পাওয়ার খুব দরকার ছিল এবং তার ছেলে সেখানে ছিল না।

-আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে তিনি এতই অসুস্থ যে আমি তার ছেলে কিনা তা বুঝার ক্ষমতা তার ছিল না। কিন্তু এটা বুঝেছিলাম যে ওই মুহূর্তে আমার সান্নিধ্য তার খুব দরকার। সেটা ভেবেই আমি তার পাশে থেকে গেলাম।

Category: Bangla, Moral Stories

Comment List

Your email address will not be published.