আপনজনদের প্রাপ্য সময় দেয়া

 

(সংকলিত)

 

 

 

বিয়ের ২১ বছর পরে, এক বাক্তির স্ত্রী চাইলো যে তার স্বামী যেন অন্য একজন মহিলাকে ডিনার করাতে ও সিনেমা দেখাতে নিয়ে যাই। স্ত্রী  আরো বললো –দেখ, আমি তোমাকে ভালবাসি, কিন্তু আমি জানি এই অন্য মহিলাও তোমাকে অনেক বেশী ভালবাসেন এবং আমি নিশ্চিত যে  তিনি তোমার  সাথে কিছুটা সময় কাটাতে খুব পছন্দ করবেন।     

লোকটির স্ত্রী যে অন্য মহিলাটির কথা বলেছিল তিনি হচ্ছেন লোকটির মা যিনি গত ১৯ বছর ধরে বিধবা কিন্তু লোকটির তার কাজের তাড়না আর নিজের সংসার ও সন্তানদের নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারনে কেবল কালে ভাদ্রে তার নিঃসঙ্গ মায়ের দেখা করা সম্ভব হয়।  লোকটি সে রাতে তার মাকে ডিনার এবং তার পর সিনেমা দেখার জন্য তার সাথে বাইরে যেতে আমন্ত্রণ করার জন্য টেলিফোন করলো।  -তোর শরীর ভাল আছে বাবা, তোর কোন সমস্যা হয়নিতো? হটাৎ করে গভীর রাতে টেলিফোন পেয়ে তদুপরি ডিনার ও সিনেমা দেখার আমন্ত্রন  পেয়ে উদ্বিগ্ন মা ছেলেকে জিজ্ঞেস করলেন।  

-না মা, ওসব কিছু না, তোমার সাথে কিছুটা একান্তে সময় কাটালে আমার খুব ভাল লাগবে। লোকটি তার প্রতিক্রিয়া জানালো। -অন্য কেউ থাকবে না শুধু আমরা দুই জন।

মা এক মুহুর্তের জন্য কিছু একটা ভাবলেন তারপর বললেন –ঠিক আছে বাবা, আমি তোর সাথে যাবো।

দিনের কাজ শেষে সপ্তহান্তে লোকটি গাড়ী চালিয়ে তার মাকে তুলতে তার  বাড়ীতে গেল। অনেক দিন পর মায়ের সাথে দেখা করা এবং তাকে নিয়ে বাইরে যাওয়ার ব্যাপারটির কথা চিন্তা করে ছেলেটির কেন জানি কিছুটা নার্ভাস লাগছিলো। মা সুন্দর সাজগোজ করে প্রস্তুত হয়ে দরজাই দাড়িয়ে ছিলেন। এটা পরিস্কার বোঝা যাচ্ছিলো মাও ছেলের সাথে এই বাইরে যাওয়া সম্পর্কে কিছুটা নার্ভাস ছিল।  

ছেলেটির মা সুন্দর করে চুল বেঁধেছেন এবং যে পোশাকটি তিনি তার  বিবাহের শেষ বার্ষিকী উদযাপন করার জন্য পরিধান করেছিলেন সেটা পরেছেন। ছেলেকে দেখে মা মিষ্টি করে হাসলেন, হাসিটা স্বর্গীয় লাগলো ছেলের কাছে।  

-আমি আমার বন্ধুদের বলেছি যে আমি আমার ছেলের সাথে বাইরে বেড়াতে যাব, শুনে তারা সবাই মুগ্ধ হয়েছিল। মা গাড়িতে উঠার সময় কথাটা বললেন।

তারা একটি রেস্তোরাঁয় গেল যেটি খুব দামি না হলেও বেশ সুন্দর এবং পরিপাটি ছিল। রেস্তোরায় ঢোকার সময় মা ছেলের বাহুটি এমনভাবে ধরলেন যেন তিনি ফার্স্ট লেডি।  

তারা বসার পর বেয়ারা মেনু কার্ড দিল। ছোট ছোট অক্ষরে লেখা মেনু কার্ডটি মা তার বয়োবৃদ্ধ চোখ দিয়ে পড়তে পারলো না ছেলেকেই তা পড়ে  শোনাতে হোল। অর্ধেকটা পড়ার পর ছেলেটি চোখ তুলে মায়ের দিকে তাকাতেই দেখলো মা তার আসনে বসে এক দৃষ্টে ছেলের দিকে তাকিয়ে আছে। আত্মভোলা অবস্থায় স্বর্গীয় হাসি তার ঠোঁটে।  

-খোকা, তুই যখন ছোট ছিলি তখন আমি মেনু পড়ে তোকে শোনাতাম।

-মা, এখন আমার পালা, তুমি আরাম করে বস আমি তোমাকে মেনু পড়ে শোনাই।

ছেলের কথাই মা তৃপ্তিতে হাসলেন। খাবারের সময় মা ছেলেতে অতি সাধারন সাদামাঠা আলোচনা হল – একে অপরের জীবনের সাম্প্রতিক  ঘটনাগুলি ছাড়া অন্য কিছু নয়।

তারা কথা বলতে বলতে হারিয়ে গেল এবং সময় পার হয়ে যাওয়াই তারা সিনেমাটি মিস করল।

মাকে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে ফেরার সময় তিনি বললেন –খোকা, আমি আবার তোর সাথে বাইরে যাব যদি এবার তুই আমার আমন্ত্রণ গ্রহন করিস তবেই।

-আমি রাজি মা। ছেলেটি হাসি মুখে উত্তর দিল।  

-তোমাদের বেড়ানো আর রাতের খাবার কেমন ছিল? ফেরার পর লোকটির স্ত্রী জিজ্ঞেস করলো।

-খুব সুন্দর। আমার কল্পনার থেকেও বেশী সুন্দর। লোকটি উত্তর দিল।

এর কিছু দিন পরে, লোকটির মা বড় ধরনের হার্ট অ্যাটাকের কারণে মারা  গেলেন। ঘটনাটি এতই আকস্মিক ছিল যে ছেলেটি মায়ের তার জন্য কিছু করার সুযোগ পেল না।

মৃত্যুর কয়েকদিন পর ছেলেটি ওই একই রেস্তোঁরা থেকে খামের মধ্যে একটি অগ্রিম পেমেন্টের রসিদ পেল। খামটির ভিতর হাতে লেখা একটি ছোট্ট চিরকুট তার চোখে পড়লো, যাতে লেখা ছিল: আমি আমার আমন্ত্রনের বিলটি আগেই পরিশোধ করে দিলাম। কারন আমি নিশ্চিত নই যে আমি সেদিন থাকতে পারবো কিনা; তবুও আমি দুটি প্লেটের জন্য পেমেন্ট করেছি – একটি তোর আর অন্যটি তোর স্ত্রীর জন্য।

-খোকা, তুই কখনোই বুঝবিনে যে সেই রাতটি আমার জন্য কী মূল্যবান ছিল। আমি তোকে ভালবাসি সোনা।  

ঘটনাটি সকলকে ভাল মত সহজে বুঝিয়ে দেয় যে, সময় থাকতে প্রিয়জনদের সঙ্গ দেয়া দরকার আরো মনে করিয়ে দেই যে, দেরী হয়ে যাওয়ার আগে প্রিয় মানুষগুলোকে বলতে হবে -আমি তোমাকে ভালবাসি।

শিক্ষণীয়ঃ জীবনের কোনও কিছুই আপনার পরিবারের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাই পবিবারের আপনজনদেরকে তাদের প্রাপ্য সময় দিন, কারণ এখন সময় নেই বলে পরে পুষিয়ে দেব বললে শেষে অনেক দেরী হয়ে যেতে পারে।   

Category: Bangla, Moral Stories

Comment List

Your email address will not be published.