৯৯ ক্লাব

(অনূদিত)

 

 

এক রাজা ছিলেন যিনি তাঁর বিলাসবহুল জীবন যাপনের ধারা সত্ত্বেও কখনো মনের ভিতর খুশী বা সন্তুষ্ট থাকতে পারতেন না। অতৃপ্তিতে ভরে থাকতো তার মন। একদিন, রাজা দেখলেন তার একজন চাকর চড়া রোদে কাজ করছে আর মনের সুখে গান গাচ্ছে। এই দৃশ্য রাজাকে ভাবিয়ে তুলল; তিনি সর্বোচ্চ শাসক, প্রাচুর্যে ভরা তার জীবন তবুও তিনি অসুখী ও হতাশ, কিন্তু একজন দরিদ্র চাকরের মনে এত আনন্দ কি ভাবে আসে?  

রাজা চাকরকে জিজ্ঞাসা করলেন, “তুমি এত খুশী কেন?” চাকরটি জবাব দিল, “মহাশয়, আমি নিতান্তই আপনার একজন চাকর ছাড়া আর কিছুই নই, তবে আমার পরিবার এবং আমার নিজের খুব বেশি কিছুর প্রয়োজন নেই – কেবল আমাদের মাথার উপরে একটি যেনতেন ছাদ এবং আমাদের পেট ভরাতে গরম খাবার হলেই যথেষ্ট।

কিন্তু রাজা এই জবাবে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। দিনের শেষে তিনি এ বিষয়ে তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত পরামর্শদাতার পরামর্শ চাইলেন। রাজার দুঃখ এবং চাকরের কাহিনী শোনার পর পরামর্শদাতা বললেন, “মহাশয়, আমি বিশ্বাস করি যে চাকরটি এখনো ৯৯ ক্লাবের অংশ হতে পারেনি।

“৯৯ ক্লাব? এবং সেটা ঠিক কী?” রাজা জিজ্ঞাসা করলেন। পরামর্শদাতা জবাব দিলেন, “মহাশয়, ৯৯ ক্লাবটি আসলে কী তা জানতে, একটি ব্যাগে ৯৯ টি সোনার মুদ্রা দিয়ে ভরে ওই চাকরটির  বাড়ির দোরগোড়ায় রেখে দিন।

রাজা সে মোতাবেকই কাজ করলেন। 

পরদিন খুব ভোরে উঠে তার বাড়ীর দরজার বাইরে চাকরটি ব্যাগটি দেখে সে এদিক ওদিক একটু তাকিয়ে সেটি তার  ঘরে নিয়ে গেল। সে যখন ব্যাগটি খুললো, তখন সে আনন্দে চিৎকার করে উঠলো … এত সোনার কয়েন! সে সেগুলো তাড়াতাড়ি গণনা শুরু করলো। বেশ কয়েকবার গণনার পরে সে শেষ পর্যন্ত নিশ্চিত হল যে সেখানে ৯৯ টি শোনার মুদ্রা  আছে। সে বিস্মিত হয়ে ভাবলো, ” নিশ্চয়ই কেউ ৯৯ টি মুদ্রা রাখবে না! তাহলে সেই শেষ সোনার মুদ্রাটি কোথায় গেল? ” 

সে বাকি মুদ্রাটির জন্য সম্ভাব্য সব স্থানে খুঁজে দেখলো, কিন্তু সেই ১০০ তম মুদ্রাটি নাগালের বাইরেই থেকে গেল। অবশেষে চাকরটি ক্লান্ত হয়ে সিদ্ধান্ত  নিল যে সে ওই ১০০ তম সোনার মুদ্রা অর্জন বা সংগ্রহ করার জন্য আগের চেয়ে আরও বেশি কঠোর পরিশ্রম করবে। ১০০ তম মুদ্রাটি অর্জন না করা পর্যন্ত সে বিশ্রাম নেবে না। 

সেদিন থেকেই চাকরটির জীবন বদলে গেল। সে সব সমই অশান্ত, ক্লান্ত আর রাগান্বিত অবস্থাই থাকতে লাগলো এবং ১০০ তম সোনার মুদ্রা অর্জনে তাকে কোন রকম সাহায্য করতে না পারার কারণে তার স্ত্রীকে অযথা বকাবকি করতে শুরু করলো। কাজ করার সময় আগের মত গান গাওয়াও একদম বন্ধ করে দিল।  

চাকরটির মধ্যে এই গুরুতর রূপান্তর প্রত্যক্ষ করে রাজা বিস্মিত হয়ে যখন তাঁর পরামর্শদাতার কাছে এ সবের কারন জিগ্যেস  করলেন, তখন পরামর্শদাতা বলল, “মহাশয়, আপনার চাকরটি এখন আনুষ্ঠানিকভাবে ওই ৯৯ ক্লাবে যোগদান করেছে।”

সে আরো বলল, “৯৯ ক্লাব নামটি ঐ সব লোকদের দেওয়া হয়েছে যাদের জীবনে খুশি হওয়ার জন্য যথেষ্ট সম্পদ থাকে সত্ত্বেও তারা কখনই সন্তুষ্ট নন, কারণ তারা সর্বদা ঐ অতিরিক্ত ১ টি কয়েনের এর জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাই এবং নিজেদেরকে এটা বলে শান্তনা দেই:” আমাকে সেই চূড়ান্ত জিনিসটি পেতে দাও এবং তাহলে আমি জীবনের জন্য সুখী হব।

শিক্ষণীয়ঃ  কেবলমাত্র আমাদের জীবনে চাহিদা পরিমিত রাখলেই  আমরা সুখী থাকতে পারি, তবে যে মুহূর্তে আমরা আরও বেশী এবং আরও ভাল কিছু পাই, তখন আমরা আমাদের পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা বাড়িয়ে দিই। ফলশ্রুতিতে আকাঙ্খা না পূরণ হওয়ার মানসিক যন্ত্রণাই  আমরা আমাদের ঘুম, আমাদের সুখ হারিয়ে ফেলি, আমরা আমাদের চারপাশের মানুষকে আঘাত করতে থাকি আমাদের ক্রমবর্ধমান চাহিদা এবং আকাঙ্ক্ষার মূল্য হিসাবে। ৯৯ ক্লাবে যোগদানের বিষয়টি প্রায় তাই। জীবনের সুখ যদি কোন  নির্দিষ্ট কিছু পাওয়ার বা অর্জনের সাথে জুড়ে দেয়া যাই তাহলে কখনোই সুখি হওয়া সম্ভব নয়, কারন চাওয়া পাওয়ার কোন শেষ নেই।        

Category: Bangla, Moral Stories

Comment List

Your email address will not be published.