প্রবৃত্তি

 

 

অবনত মস্তকে আসামির কাঠগড়ায় দাড়িয়ে অবনী। সামনে উঁচু আসনে উপবিষ্ট বিচারক। সর্ব ক্ষমতা যার হাতে ন্যাস্ত। 

পশু নির্ভর জীবন আর জীবিকা অবনীর। ওগুলোকে নিয়েই জীবন চলা আর ওগুলোই ওর পাথেয়।

পশুগুলো যে যার সাধ্যানুযায়ী বিভিন্ন রকমের কাজ করে মুলত: নিজেদের বাচার তাগিদে। প্রতিটি পশুর যে বিশেষ বিশেষ জন্মগত কর্মদক্ষতা আছে তা মুলতঃ ওদের বেচে থাকার তাগিদ থেকে উদ্ভূত হলেও সেগুলোকে কাজে লাগিয়েই অবনীর জীবিকা নির্বাহ হয়, জীবন চলে ওর।

পশুগুলো সব জন্মসূত্রেই প্রাপ্তি ওর।

জীবিকা অন্বেষণে সহায়ক পশুগুলো বিভিন্ন সময়ে ও কার্যক্ষেত্রে ওর নিয়ন্ত্রণের বাইরে যেয়ে অনেক পাশবিক কাজ করেছে। অবলা পশুরগুলোর মালিক হিসাবে তার জবাবদিহী করার জন্য অবনীকে আসামীর কাঠগড়ায় দাড় করানো হয়েছে।

পশুগুলো প্রাপ্তির ব্যাপারে ওর কোন দায় দায়িত্ব নেই, তবে প্রাপ্তির পর ওগুলোর পশুবৃত্তিতে উন্নতি বা অবনতির দায় দায়িত্বতো ওকেই নিতে হবে।

পশুতো পশুই। পশুত্বই ওদের সকল কর্মপ্রেরনার উৎস। বলাবাহুল্য পশুগুলো সবাই নিজ নিজ ক্ষেত্রে আলাদা আলাদা সাধ্য সম্পন্ন। সবাই এক এক বিষয়ে সম্ভাবনাময়। এই উৎসজড়িত দক্ষতার মধ্যে যেটুকু খারাপ বা ক্ষতিকারক তা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রেখে ওদের ক্ষমতাকে যত বেশী উদ্দেশ্য সাধনজনিত কাজের উপযোগী করে তোলা যায় তার মধ্যেই নিহীত পশুগুলোর এবং অবনীর উপজীব্য।

পশুগুলোর বিভিন্ন অপকর্মগুলো যা মুলতঃ ওদের বেচে থাকার তাড়না থেকে উদ্ভূত সে সম্পর্কে অবনী জ্ঞাত। অবনী এটাও জানে যে পশুগুলোর কর্মকান্ডের জন্য ওকেই দায়ী করা হবে।

পশুগুলোর সাথেই অবনীর জীবন জীবিকা, প্রতিটি চিন্তা চেতনা এমন ভাবে জড়িত যে ওদেরকে বাদে ও নিজের জীবন কল্পনাও করতে পারে না। ওরা অবনীর জীবনের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। পশুগুলো যেন ওর এক একটা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ, সুখে দুঃখে সব সময় ওর সাথে। তায় অনেক সময়ই ওর নিজের মনুষ্য দুর্বলতার জন্য ওদের কিছু অন্যায় আবদার যেমন মেনে নেয় তেমনি ওদের কিছু কিছু ত্রুটিও অবনী এড়িয়ে যায়।

ওর আওতাধীন পশুগুলোর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ দাড় করানো হয়েছে। একের পর এক অকাঠ্য প্রমানসহ অভিযোগগুলো উপস্থাপন করা হচ্ছে।

অভিযুক্ত পশুগুলো সব অবনীর সাথেই আছে। কিন্তু ওরা কথা বলতে পারে না তাই ওদের পক্ষে অবনীকেই যা বলার বলতে হবে।

ওর বাঘটা বিকট শক্তিশালী হিংস্র পশু। খাওয়াই যেন ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ। খাওয়া অর্থ বেচে থাকা। শরীর আর মনের তৃপ্তির জন্যই ওর খাওয়ার চাহিদা। বেচে থাকার জন্য, ভাল থাকার জন্য, তৃপ্তি পাওয়ার জন্য খাওয়া। কিন্তু সে চাহিদার যেন শেষ নেই। এই চাহিদা মেটাতেই ওর সকল কর্মতৎপরতা পরিচালিত হয়। অভ্যাসবসতঃ বাঘটা তরতাজা শিকারকে তাড়া করে তাকে পরাস্ত করে তা ভক্ষন করার মধ্যে দারুন তৃপ্তি পায়। ওর শক্তি সাহস বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদিকে যদি ভাল কাজ করার জন্য ব্যবহার করতে

হয় তবে সব কিছুর আগে ওর ক্ষুধা নিবারন করতেই হবে। তা না হলে ও ওর সকল শক্তি, বুদ্ধি সব কিছুই ক্ষুধা নিবারনের কাজে ব্যয় করবে, আর সামনে যা পাবে সব খেয়ে সাবাড় করে দেবে। এমনকি অবনীকেও!

অবনীর অন্য পশুটা হলো কুকুর। কিছু ওর মন মত হোক না হোক প্রথম কাজটি যা ও করে তা হচ্ছে শুখে পরখ করা। ওর এই অভ্যাসটার পিছনে একটা জিনিসই কাজ করে সেটা হলো খাদ্যান্বেষণ বা পথ অন্বেষণ। শুখে পরখ করা ওর জন্মগত অভ্যাস আর এ ব্যাপারে ও বিশেষ পারদর্শী। অন্য কারো দ্রব্যসামগ্রী শুখে দিলে তাতে রোগ জীবানু ছড়িয়ে যেতে পারে বা পবিত্রতাও নষ্ট হতে পারে সে দিকে একটুও খেয়াল নেই পশুটির।

ওর হরিণটা কান খাড়া করে সবকিছুই শুনবে। শোনা ওর নেশা, শুনতে ও দারুন পটু। ভাল খারাপ বিবেচনা করে শোনে ও, যেটা ওর ভাল লাগে ও সেটা বেশি করে শুনবে তাতে কারো কিছু এসে যাই কিনা তার খেয়াল ওর নেই।  দারুন ভীতু ওটা। সব সময় প্রস্তুত বাঘ বা সিংহের আসার কোন শব্দ পেলেই ও দৌড়ে পালাবে। জীবন বাচানোর স্বতঃস্ফূর্ত তাগিদ। অনেক দূর থেকে আওয়াজ শুনে দৌড় দেয় বলে বাঘের অভিযোগ যে সে যত লুকিয়েই আসুক না কেন ওকে ধরা যায় না ফলে উপোষ থাকতে হয়। হরিণের আশে পাশে অন্য নীরিহ প্রাণী আসলেও ও টের পায় এবং অনেক সময় অকারণে ওদেরকে সিঙ দিয়ে গুতাও দেয়।

অবনীর অন্য প্রাণীটি হচ্ছে ঈগল। আকাশে ওড়ে ডানা মেলে মনের সুখে। বিধাতা প্রদত্ত চোখ দুটো মেলে সব দেখতে চাই ও। কোন মান বিচার ছাড়াই। উদ্দেশ্য একটায় দেহ মনের তৃপ্তি। ভাল কিছু দেখে শুনে ভোগ করতে চাই ও। ওর গভীর ভেদকারী চোখ দুটো অত দূর থেকেও শিকার সনাক্ত করে ছো মেরে ধরে খায়। ওর জন্য অনেক নীরিহ প্রাণী একটু নিশ্চিন্তে ঘুরতেও পারে না।

ওর সাপগুলো দারুনভাবে আবহাওয়া সচেতন। বেশী গরম বা বেশী শীত কোনটায় ও পছন্দ করে না।

গাটা নাতিশীতোষ্ণ করতে ও বেজাই অভ্যস্ত। সে লক্ষ্য অর্জনে ও যা প্রয়োজন তাই করে। গরমের সময় গায়ের অতিরিক্ত চামড়া ঝেড়ে ফেলে রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে। তারপর আবার ভয় পেয়ে রাস্তা ঘাটে মানুষকে কামড় দেয়। শীতে জড়ষড় হয়ে বিভিন্ন গর্তে বা ঘরের কোণে আশ্রয় নিয়ে অন্যের জীবন বিপন্ন করে তোলে।

বাঘটা যত বেশী ক্ষীপ্রতা প্রদর্শন করতে পারে, কুকুরটা যত বেশী তীক্ষ ভাবে ঘ্রান নিয়ে বস্তু সামগ্রী সনাক্ত করতে পারে, হরিনটা যত দূরের শব্দ শুনে আগত কিছু সম্পর্কে পূর্বভাষ দিতে পারে, ঈগলটা যত দূর থেকে দেখে এবং সাপটা ওর ত্বক দিয়ে যত নিভূর্ল ভাবে অনুভব করে বিভিন্ন বস্তু সামগ্রী নির্ধারন করতে পারে তার উপরই নির্ভর করে ওদের সবার বেচে থাকা এবং সামনে চলা।

ওগুলোকে নিয়ে সব সময় খুব সজাগ থাকে অবনী। সে কখনোই চায়না যে তার পশুগুলোর তাদের নিজেদের জীবন বাচানোর তাড়না উদ্ভূত কার্যকলাপে অন্য কারো ক্ষতি হোক। কারণ ও জানে ওদের সব অপকর্মের জন্য জবাবদিহি তাকেই করতে হবে আর শাস্তিও ওকেই ভোগ করতে হবে।

ওদের জীবন সহায়ক প্রয়োজনগুলো সাধ্যমত পুরন করতে অবনী সব সময়ে তৎপর।

কিন্তু অবনীর নিজের ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা আছে যা ওকে অনেক সময় অপারক করে দেয়।

প্রথম অক্ষমতা হচ্ছে পশুগুলোকে ওদের প্রয়োজন অনুযায়ী সবকিছু সরবরাহ না করতে পারা। এ অক্ষমতার ব্যাপারে ও নিজেকেই অপরাধী সাব্যস্ত করে। 

দ্বিতীয় অক্ষমতার ব্যাপারে অবনী একেবারে অসহায় এবং এর জন্য কাকে দায়ী করবে তা ও বুঝতে পারে না। পশুগুলো সবাই জন্মগত ভাবেই যে যে চরিত্রের অধিকারী তা থেকে পুরোপুরি ভাবে দূরে রাখার ব্যাপারে অবনী অক্ষম।

কয়লার প্রকৃতিপ্রদত্ত রংটাকে বদলানোর বৃাথা চেষ্টা না করে বিধাতা প্রদত্ত নিজস্ব রংটা ঘসে মেজে একটু  চাকচিক্য করে বা সঠিক ভাবে পারিপার্শিকতার সাথে মানানসই করে তোলার মধ্যেই প্রকৃত কৃতিত্ব নির্ভর করে। এটাতেই অবনী বিশ্বাসী এবং সে ভাবেই কাজ করে ও।

পশুগুলো বিভিন্ন ভাবে যে অন্যায় আচরন গুলো করেছে তা প্রমান সহ অবনীর সামনে নির্ভুল ভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে এক এক করে। কোন ঘটনা সম্পর্কে কোন পাল্টা অভিযোগ নেই অবনীর।

অবনীকে ঐ পশুগুলো নির্ভর করেই সৃষ্টি করা হয়েছে। পশুগুলোর মধ্য থেকে বেছে নেয়ার বা কোনটা পরিবর্তন করার কোন সুযোগ তো ওকে দেয়া হয়নি।

অবনী পশুগুলোকে যতদুর সম্ভব তাদের জন্মগত প্রবৃত্তির ক্ষতিকর প্রভাবগুলো নিয়ন্ত্রনে রাখার চেষ্টা করেছে। যতটুকু পারিনি সেটুকু ওর অক্ষমতা। অক্ষমতা যদি অপরাধ হয় তাহলে অবনী নিঃসন্দেহে অপরাধী।

অবনী প্রত্যেকের স্বকীয়তা সম্পর্কে সব সময় সচেতন এবং সে অনুযায়ীই ওর সাধ্যমত চেষ্টা করে ওগুলোকে পরিচালনা করতে।

অবনী জানে যে নিজের সাধ্যকে অতিক্রম করার ক্ষমতা ওর নেই।

মরিয়া হয়ে কোন কোন সময় অবনী পশুগুলোকে শেকলে বেধে একদম শক্ত খাচার গন্ডিতে আবদ্ধ করে  ওদেরকে  নিয়ন্ত্রন করেছে। সঞ্চিত সম্পদ থেকে ওদের বেচে থাকার প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করেছে অবনী।

গন্ডিবদ্ধ থেকে থেকে আর অর্জন না করেই প্রয়োজন মোতাবেক সব কিছু পাওয়াতে পশুগুলোর সবারই কম বেশি কর্মশক্তি ক্রমশঃ ক্ষীন থেকে ক্ষীনতর হয়েছে। নিয়ন্ত্রণের নামে বলতে গেলে ওদেরকে মোটামুটি নিষ্ক্রিয় করে রাখা হয়েছে। স্বাধীন ভাবে নিজস্ব শক্তি বা বুদ্ধি খাটিয়ে নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবনের সমস্ত পথ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে অবনী।

একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ওদেরকে ওদেরকে পশুত্ব থেকে বিরত রাখা।   

তাতে একদিকে ওদের উপার্জন ক্ষমতা প্রায় শূন্য স্তরে পৌঁছেছে অন্যদিকে অপরাধ করার ঘটনা একদম ঘটেনি বললেই চলে। বলতে গেলে কালে ভাদ্রে বেড়া ভেঙ্গে বা অবনীর অনিচ্ছাকৃত গাফিলতির কারণে দুএকটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া পাশবিকতার কোন ঘটনায় ঘটেনি তখন।

কিন্তু ওভাবে সঞ্চিত সম্পদ থেকে ওদের জীবিকার প্রয়োজন মেটাতে একদিকে ধীরে ধীরে সঞ্চিত ভান্ডার নিশ্বেষ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে, অন্যদিকে একটু খেয়াল করলে দেখা যায় বাইরে থেকে পশুগুলোর শরীর স্বাস্থ্য ভাল দেখা গেলেও ওদের প্রাণ শক্তি ধীরে ধীরে হ্রাস পেয়েছে।

অন্য একটি বিশেষ দিক হলো ওরা খাচার গণ্ডিতে আবদ্ধ থাকতে অভ্যস্ত হয়ে উঠলেও প্রতিটি প্রাণীই সব সময় খাচার বাইরের প্রাকৃতিক জগতের দিকে আকুল দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকেছে।

পক্ষান্তরে, প্রকৃতির রাজ্যে বিচরণরত পশুগুলো প্রতিদিন প্রতিনিয়ত জীবন নির্বাহের তাগিদে পরিবর্তনশীল পরিস্থিতির আলোকে বেচে থাকার তাগিদে নতুন নতুন উপায় উদ্ভাবন করে, অধিকতর দক্ষতা অর্জন করে নিজেদেরকে প্রস্তুত করেছে।

পশুগুলোকে কঠোর শৃংখলে আবদ্ধ করে ওদেরকে ওদের মজ্জাগত অপরাধপ্রবনতা থেকে দুরে রাখা যায় ঠিকই, কিন্তু দিনে দিনে ওদের প্রকৃতি প্রদত্ত গুনাবলী নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ার কারণে পশু গুলো যেমন ধীরে ধীরে নির্জীব ও নিস্তেজ হয়ে পড়ে তেমনি অবনীর জীবিকা নির্বাহ কষ্টকর হয়ে পড়ে।

সঞ্চিত সম্পদ অফুরন্ত নয়। তা নিশ্বেষ হয়ে গেলে নিষ্ক্রিয় পশুগুলোর কি উপায় হবে আর অবনীর নিজের!

ওদের মধ্যে পাশবিকতা তাহলে কেন দিল বিধাতা!

কথাগুলো ভাবতে ভাবতে একটা অসহায়ত্বের নিশ্বাস বেরিয়ে আসলো অবনীর বুক খালি করে।

পশুগুলোকে বাচিয়ে রাখতে হবে, ওদের প্রকৃতিপ্রদত্ত গুনাবলীকেও বাচিয়ে রাখতে হবে। অধিকন্ত দিনে দিনে জীবনধারণ কষ্টকর হওয়ার প্রেক্ষিতে ওদেরকে অধিকতর কর্মক্ষম করতে হবে।

অপরদিকে ওদের পশুত্বকে দমন করতে হবে।

তাহলে প্রয়োজনটা মোটামুটি বিপরীতমুখী, ভাবলো অবনী। একদিকে পশুগুলোকে ওদের নিজেদের জীবনী শক্তি, উদভাবনী শক্তি বর্ধন করার জন্য প্রয়োজনীয় স্বাধীনতা প্রদান করতে হবে। অন্যদিকে ওদেরকে পাশবীকতা থেকে বিরত রাখার জন্য প্রয়োজনীয় নিয়ন্ত্রনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

পশুগুলো ওদের কর্মতৎপরতা চালায় প্রকৃতি তাড়িত হয়ে, তাই এব্যাপারে চিন্তার খুব একটা অবকাস আছে বলে মনে হয় না। ওরা বাইরের প্রকৃতি পরিস্থিতি এবং একে অন্যের সাথে প্রতিযোগীতা করে দক্ষতা বাড়াতে পারলে তার ফলটা হাতে নাতে পাবেই। শুধুমাত্র খেয়াল রাখতে হবে যেন ওদেরকে শৃংখলাবদ্ধ না করা হয়। তবে একটা সীমা নির্ধারন করে দিতেই হবে।

অন্যদিকটা অর্থাৎ পাশবীকতা পরিহার। এ ব্যাপারেও যদি ঐ একই ফরমুলা ব্যবহার করা হয়, যে কর্মের ফল অবশ্যই ভোগ করতে হবে অর্থাৎ শাস্তি তাহলে অপরাধ প্রবনতাও কমে যাবে নিশ্চিত ভাবেই।

বাচাতে হবে জীবন, বাচতে হবে শাস্তি থেকে।

পৃথিবীর যা কিছু খারাপ যা কিছু কদর্য্য তার কিছু না দেখার প্রচেষ্টায় পুরো পৃথিবীকে ঢাকার ব্যবস্থা না করে যদি নিজের ছোট ছোট দুটো চোখের উপর ঢাকনা দেয়ার ব্যবস্থা করা যায় তাহলে সেটা সহজও হবে আর আক্ষরিক অর্থে সম্ভবও হবে।

এটা একটা সমাধান।

কিন্তু দুটো চোখই ঢেকে দিয়ে কষ্ট করে হয়তো দিন চালানো যাবে কিন্তু জীবন চলবে কেমন করে!

উত্তম ব্যবস্থা হবে যদি এমন একটা চশমা উদভাবন করা যায় ভিতর দিয়ে যা কিছু খারাপ ও কদর্য্য সেগুলো বাদ দিয়ে অন্য সব ভাল কিছু দেখা যায়। এ ব্যবস্থাটা সহজ এবং সম্ভব। সহজ এ জন্য যে সবার জন্য এক জোড়া করে চশমা হলেই চলবে। আর সম্ভব এজন্য যে বিধাতা প্রদত্ত চোখ দুটোকে প্রকৃতি প্রদত্ত প্রবৃত্তি সমূলে নিবারন করা থেকে বিরত রাখা হবে।

তানা হলে দুচোখ বাধা যে কোন প্রাণী তার পুরো সময় ব্যয় করবে সুযোগ খুজে বের করার জন্য, কখন বাধনটা খুলে পৃথিবীটা একটু দেখে নেবে।

আর এ ধরনের সুযোগও যদি কালে ভাদ্রেও না মেলে তাহলে এ ব্যবস্থা ভেঙ্গে চুরমার করার চেতনাও লালন করতে পারে মনের গভীরে।

-ধর্মাবতার আপনিই বলুন কি করতে পারতাম আমি?

অবনীর প্রশ্নটা বিরাট কোর্ট রুমের দেয়ালে দেয়ালে আছড়ে পড়ে অদ্ভূত ভাবে ধ্বনি প্রতিধ্বনি হতে লাগলো।

আপত মস্তকে দাড়িয়ে থাকা অবনী ধীরে ধীরে মাথাটা উঠিয়ে বিচারকের দিকে তাকালো।

Category: Meaning of Life, Posts

Comment List

Your email address will not be published.