ইন্দ্রীয়ের খাঁচা

 

চশমা ছাড়া আজ নিজেকে বড় অসহায় লাগছে।
ভাল ঘুম হয়নি গত রাতে। শেষ রাত থেকে বুকের বা পাশটা পিন পিন করে ব্যাথা
করছিলো। অফিসে আসার সময় চশমাটা ভুলে এসেছি।
সাধারণত বাসা থেকে বেরোনোর আগেই চশমাটা পরে নিই। কিন্তু আজ কি যে হলো
চশমাটা চোখে না দিয়েই গাড়ীতে উঠেছি।
হাতের লাঠিটার মত চশমাটা নিতে ভুল হওয়ার কথা নয়!
গত বেশ কয়েক বছর থেকে চশমা ব্যবহার করতে হয়। মাঝে মধ্যে চশমাটা আনতে ভুলে
গেলেও কষ্ট করে কাজ চালিয়ে নিতে পারতাম প্রথম প্রথম। এখন আর পারি না। চশমা
ছাড়া সব কিছু ঝাপসা লাগে।
গোড়ার দিকে শুধু পড়ার জন্য চশমা লাগলেও এখন দূরের জিনিস দেখতে কষ্ট
হওয়াতে ডাক্তার কাছের ও দূরের জন্য পাওয়ার মিলিয়ে বাইফোকাল চশমা ব্যবহারের
পরামর্শ দিয়েছে।
চশমার উপর নির্ভরশীল হতে হতে ক্রমেই চোখ দুটো এখন এমন অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে
যে চশমা বাদে লেখাগুলো যেমন শুধু কালো কালো দাগ মনে হয়, তেমনি একটু দূরের সব
মানুষের মুখগুলোও একই রকম মনে হয় আলাদা করতে পারিনা।
চশমার উপর নির্ভরতা বেড়ে যাওয়াই এখন আর একদম ঝুঁকি নিই না। কম করে হলেও
তিন জোড়া চশমা রাখি সব সময়- একটা সাথে থাকে পকেটে বা চোখে, একটা গাড়ীতে
আর অন্যটা ব্রিফ কেসে। যাতে করে কোন দিন সাথেরটা আনতে ভুলে গেলেও গাড়ী বা
ব্রিফ কেস যে কোন একটা দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়া যায়।

অফিসে ঢুকেই টের পেলাম চশমাতো আনা হয়নি। আমকে নামিয়েই গাড়ীও চলে গেল। ভাবছি কি করি।
ড্রাইভারের বউটা অসুস্থ কয়েক দিন ধরে। তায় আমিই ওকে বলেছিলাম যে আমাকে অফিসে
নামিয়েই ও যেন ঐ গাড়ীতে করেই ওর বউটাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। অন্য দিন
আমাকে নামিয়ে পিএ’র অফিসে বসে ও। কিন্তু আজ নামিয়ে দিয়েই তাড়াহুড়া করে চলে
গেছে।

সকাল থেকেই আকাশটা মুখ ভার করে আছে, যে কোন সময় বৃষ্টি শুরু হবে। শীতটা
পড়বো পড়বো করেও যেন পড়ছে না। এই বৃষ্টিই বোধহয় শীত নিয়ে আসবে।
ব্রিফ কেসে একটা চশমা আছে, ভাবলাম ওটা দিয়ে কাজ চালিয়ে নেব।

ব্রিফ কেসটা কম্বিনেশান লক দিয়ে বন্দ করা। লকের নম্বর গুলো বেশ ছোট, খালি চোখে
পড়তে পারলাম না। আন্দাজে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নম্বর মেলানোর চেষ্টা করলাম অনেক সময়
ধরে। কিন্তু তাতে কাজ হলো না।
ভারী অসহায় লাগতে লাগলো।
ড্রাইভারটা কয়েক বছর ধরে আমার সাথে। অনুগত এবং বিশ্বস্ত। আমার একটু ভোলা মন
তা ও জানে। তায় প্রতিদিন সকালে বাসা থেকে বেরুনোর সময় ও আমার দিকে তাকিয়ে
পরীক্ষা করে বা কখনো সরাসরি জিজ্ঞেস করে প্রয়োজনীয় ছোট খাট জিনিসপত্র যেমন ঘড়ি,
লাঠি, মানিব্যাগ, চশমা ইত্যাদি নিয়েছি কিনা নিশ্চিত হয়।
চশমাটা চোখে দিয়েই ঘর থেকে বের হই। আজকে চোখ খালি ছিল কিন্তু সেটা ওর চোখেও
পড়লো না। ওর অসুস্থ বউয়ের চিন্তাটা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাওয়াই বোধহয় খেয়াল
করেনি।
বাড়ী থেকে খালি চোখে বেরুলাম তা সত্ত্বেও কেউ খেয়াল করলো না! তাছাড়া আমার ঘড়ি,
চশমা, মানিব্যাগ ইত্যাদি আমার খাটের সাইড টেবিলের উপর থাকে, চশমাটাও নিঃশ্চয়
ওখানেই পড়ে আছে। চলে আসার পর কেউ একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়ার কথা।
ভাবছি যদি এখনই টেলিফোনটা বেজে উঠতো আর বাসা থেকে আমার চশমাটা ফেলে আসার
কথা জানাতো। কিন্তু তাতেই বা কী লাভ হতো, কে নিয়ে আসতো বাসা থেকে।
আমি বাসা থেকে রওয়ানা দিই সকাল ষাড়ে ছটার দিকে। আধা ঘন্টার মত লাগে রাস্তায়।
সাতটার মধ্যে অফিসে পৌছায়।
কাজ না থাকলে অত সকালে কেউ অবশ্য ঘুম থেকে ওঠে না বাসায়। আমিও কাউকে
অযথা বিরক্ত করিনা কখনো। নিচে নেমে আসতে আসতে চায়ের কাপ হাতে ওয়েটারটা
দাড়িয়ে থাকে। চায়ে চুমুক দিয়েই গাড়ীতে উঠি। ওটাই আমার ব্রেকফাষ্ট। অসুবিধা হয়না
কারণ লাঞ্চের আগে অফিসে এসে কিছুনা কিছু খাওয়া হয়।
অফিসের জানালা গুলো টিনটেড গ্লাসের। ভিতর থেকে বাইরের সবকিছুই দেখা যায়।
অফিসটা দোতলা, সামনেই সরু একটা পাকা রাস্তা নিজস্ব ব্যবহারের জন্য। রাস্তাটার
ওপারেই সবুজ ঘাসে ঢাকা বড় একটা মাঠ। সেখানে বিভিন্ন কাজে কর্মরত সবাইকেই দেখা যাচ্ছে।
আসলে অফিসটা এভাবেই তৈরী যেন অফিসে বসে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকে অন্যান্যদের
কাজের তদারকি করা যায়।
ব্রিফ কেসটা খুলে চশমাটা বের করতে না পারায় হাতে আজ কোন কাজ নেই। ভাবলাম
ড্রাইভারটা ফেরত আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।
জানালার কাচের ভিতর দিয়ে তাকিয়ে আছি বাইরে। কর্মচঞ্চল সবাই।

গত প্রায় দুই বছরের অধিক সময় ধরে কাজ করছি এ অফিসে। তায় সবাইকেই কম বেশী চেনা আমার।
কিন্তু একি আজ কাউকে চিনতে পারছি না কেন!
জানালার ওপারে সবাইকেই একই রকম মনে হচ্ছে আজ। একজন থেকে অন্যজনকে
আলাদা করতে পারছি না।
এতদিন একসাথে কাজ করার সুবাদে সবার সম্পর্কেই কমবেশী একটা ধারণা জন্মেছে।
এদের কেউ ভালো, কেউ খারাপ, কেউ কাজে ফাঁকি দেয়, মিথ্যা কথা বলার অভ্যাস আছে কারো বা অন্যান্য অন্যায় কাজ করে। আবার অনেকেই আছে যারা কাজে আন্তরিক ও পারদর্শী, সৎ মিষ্টভাষী
ইত্যাদি।
আজ মনে হচ্ছে- আমার এই ধারণাগুলো সব যেন আমার চশমার দুটো কাঁচে স্থায়ী রং
লাগিয়ে দিয়েছে। চশমাটা চোখে লাগিয়ে ওদের দিকে তাকালে সবাইকে ভিন্ন ভিন্ন রুপে
দেখি। তায়তো কাউকে দেখলে ভালো লাগে আবার কাউকে দেখলে ভালো লাগে না
অবচেতন মনে।
সবুজ ঘাসে ঢাকা মাঠটার মধ্যে কিছু কিছু জায়গায় ঘাস মরে মাটি বেরিয়ে গেছে। দৃষ্টি কটু
লাগে। তায় পরিকল্পনা করেছি ঐ জায়গাগুলোতে নতুন করে ঘাস লাগানোর। কিন্তু আজ
খালি চোখে বিবর্ণ ঘাসের স্থান গুলো আর চোখে পড়ছে না। সমস্ত মাঠটায় সুন্দর মসৃন আর
সবুজ দেখা যাচ্ছে। একই রকম, যেন কার্পেট বিছানো।
সামনের রাস্তাটার ধার ঘেসে বিভিন্ন বর্নের ফুলগুলোর কোন কোনটা এতদিন বেমানান মনে
হলেও এ মূহুর্তে পুরোপুরি সামঞ্জস্যপূর্ণ মনে হচ্ছে।
উড়োজাহাজের জানালা দিয়ে পৃথিবীটাকে দেখলে যেমন স্বপ্নিল মনে হয়, যেমন ভাবে গ্রাম
শহর আর লোকালয় গুলোকে শান্ত সৌম্য শান্তির আবাস আর খোলা প্রান্তর মাঠ ঘাট
প্রভৃতিকে প্রকৃতির নানা রংয়ের চাদরে ঢাকা মনে হয়, খালি চোখে সবকিছুই তেমনি মনে
হচ্ছে আজ।
জানালার ধারে দাড়িয়ে বাইরের পৃথিবীটা দেখছিলাম খালি চোখে।

আকাশটা মেঘলা। বোধহয় বৃষ্টি নামলো ঝম ঝম করে। জানালার ওপারে সবাই
দৌড়াদৌড়ি করে যার যার ঘরে চলে গেল।
সব ফাঁকা এখন কেউ কোথাও নেই। বিশাল সবুজ মাঠ, গাছ পালাগুলো থেকে থেকে
ঝড়ের ঝাপটা কেবল দুলছে। শুধু বৃষ্টি পড়ার শব্দ আর মাঝে মধ্যে মেঘের গুড়গুড়ুনি।
প্রকৃতির একচ্ছত্র মাতলামি যাকে বলে।
ইন্টারকমটা বেজে উঠলো। বেসুরো লাগলো শব্দটা। দেখার চেষ্টা করলাম কার নম্বর। খালি
চোখে পড়তে পারলাম না। ভাবলাম ভালোই হলো পূর্ব ধারণা নিয়ে আজ কিছুই করতে চায়
না।
চেয়ারে বসে হ্যান্ড সেটটা উঠালাম। আমার ষ্টাফ অফিসারের গলা।
-স্যার দশটার সময় যে কনফারেন্স ছিল সেটা বাতিল হয়ে গেছে।
কনফারেন্সের কথাটা ভুলেই গিয়েছিলাম। খুশি হলাম সংবাদটাতে। ওকে ধন্যবাদ জানিয়ে
বললাম – ঠিক আছে।
কনফারেন্স থাকলে আজকে কোন অফিসের কাজ করা যেত না। কোন কাজ করতেও মন
চাচ্ছে না আজ।
-আজ আমি একটা বিশেষ কাজে ব্যস্ত, সাধারন চিঠি পত্র দেখবো না। বিশেষ জরুরী কিছু না
থাকলে আমাকে কল করোনা।
কথাটা বলে হ্যান্ড সেট রেখে চেয়ারটা টেনে জানালার ধারে গিয়ে বসলাম। বিদ্যুৎ চলে
গেল। অফিসের ভিতরটাও বাইরের মত ঝাপসা হয়ে গেল।
এখন বাহির ভিতর সব একই রকম অভিন্ন। কোন কিছুর মধ্যেই আজ দৃশ্যতঃ কোন
পার্থক্য করতে পারছি না। বৃষ্টির একটানা শব্দ এই শব্দময় পৃথিবীর সব শব্দকে ছাপিয়ে
একাকার করে দিয়েছে। আর আকাশ থেকে নেমে আসা বৃষ্টির পানি সব ডোবা গর্ত খাল
বিল মাঠ প্রান্তরকে একই সমতলে দাড় করিয়েছে।
মানুষের মনের জন্য পাঁচটি ইন্দ্রীয় তথ্য সংগ্রহ করে। আজ পঞ্চ ইন্দ্রীয়র এক মূল্যবান
ইন্দ্রীয়র শক্তি কমে যাওয়ায় ইন্দ্রীয়ের দৌরাত্ব সামগ্রীক ভাবে কমে গেছে। আর আজ মনের
রাজত্ব যেন বেড়ে গিয়েছে শতগুনে- যার বিচরণ বেশীর ভাগ সময় অতীতে ও বর্তমানে।
কত কিছু মনে পড়ছে আজ। আহ এর আগে কখনো বুঝিনি চোখ বন্দ করলে এত কিছু
দেখা যায়, কান বন্দ করলে এত কিছু শোনা যায়। অতীত ভবিষ্যৎ সবকিছু। অতীতের
কতকিছু তার সব রুপ রস গন্ধ সুর সবকিছু সাথে নিয়েই হাজির হচ্ছে এক এক করে।
ভবিষ্যৎটাও উকি ঝুকি দিচ্ছে নানা রঙে সেজে।
অতীত আর ভবিষ্যতের মধ্যে একটা অভিন্নতা আছে। এ দুয়ের কোন আনন্দ যেমন মনকে
দোলা দিলেও উদ্বেলিত করে না তেমনি কোন বেদনার স্মৃতি পীড়া দিলেও শোকাবিভূতও
করে না।
বর্তমানকে নিয়েই যত মাতামাতি, যত মাতলামি। ঈন্দ্রীয়গ্রাহ্য যা কিছু তার সবকিছুই
বর্তমান, যার অস্তিত্ব ক্ষনিকের জন্য মাত্র।
ঈন্দ্রীয়ের কাজই যেন সবকিছুর মধ্যে কেবল পার্থক্য খুঁজে বের করা। সব কিছুর খুঁত খুঁজে বের
করা।
কতকিছু স্মৃতির পাতায় ভেষে উঠছে এই মুহুর্তে। অতীদের আনন্দ বেদনায় ভরা কত
স্মৃতি।

অনেক বেদনার কথা মনে পড়ছে। মনে হচ্ছে বেদনাগুলো আমি পেয়েছি কোন কারণ
ছাড়াই। হাতের লাঠিটা দেখে এ্যাক্সিডেন্টের স্মৃতিটা ভেসে উঠলো, খুবই বেদনাদায়ক!
প্রতিদিনকার মত সেদিন সকালেও গাড়ীর পিছনের সিটে বসে অফিসে যাচ্ছি। গাড়ীর
জানালা দিয়ে বাইরের রুপ রসের যতটুকু আস্বাদন করা সম্ভব তার কোন কিছু নিতেই কার্পন্য করছি
না। হটাৎ করে কি হলো জানি না, গাড়ীটা ভীষণ জোরে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়লো। ভালোই
হয়েছিল যে জ্ঞান হারিয়েছিলাম। জ্ঞান ফিরে পেতেই কি অসহনীয় যন্ত্রনা। ডান পায়ের
হাটুর জয়েন্টটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। জীবনের উপর একটা স্থায়ী ক্ষত পড়লো। তখন
থেকেই লাঠিতে ভর দিয়েই হাটতে হয়।
কাকে দোষ দেব আমার এমন অবস্থার জন্য। অন্য যার বা যা কিছুর দোষেই ঘটনাটা
ঘটুক, আমার দোষে তো নয়। তাহলে এটা কি শাস্তি! আমাকে শাস্তি দেয়া হয়েছে!
বছর দশেক আগে আরেকটা ঘটনা মনে পড়ছে। যুদ্ধবিদ্ধস্ত দেশ মোজামবিকের রাজধানি
মাপুতুতে গেলাম একটা শান্তিরক্ষা মিশনে। একটা পাঁচ তারা হোটেলে থাকি। কিন্তু
তখন দূর্দশাগ্রস্থ দেশটির অন্যান্য সবকিছুর মত হোটেলটা নামেই পাঁচ তারা।
সেদিন রবিবার অন্যান্য কয়েকজনের সাথে সমুদ্র তীরে যাবো একটু ঘুরতে। সকালেই
বেরুবো, সময় মত প্রস্তুত হয়ে অন্যান্য সাথিরা সবাই লবিতে অপেক্ষা করার কথা। তেইশ তলা থেকে
নামার জন্য লিফটে উঠলাম। ছোট্ট লিফট পাচ থেকে ছয় জনের মত মানুষের জন্য।
ছুটির দিন তায় এত সকালে কেউ নেই আমি একাই লিফটে। কয়েক তলা নেমেই লিফটটা
বন্দ হয়ে গেল। ভাবলাম এখনই আবার চলতে শুরু করবে। কিন্তু না ওটা আটকেই
থাকলো। ছুটির দিন সকাল বেলা, লিফট ম্যানও নেই। পনেরো মিনিট আধা ঘন্টা কিছুই
হচ্ছে না। ঘামে সমস্ত শরীরটা ভিজে যাচ্ছে। কত ভয়ংকর সব সম্ভাবনা চোখের সামনে
ভেসে উঠছে। মনে হলো এখনই বোধহয় দমটা বন্দ হয়ে যাবে। পাগলের মত চিৎকার
করছি, দরজায় সজোরে ধাক্কা দিচ্ছি। কিন্তু কিছুতেই কিছু হচ্ছে না।
এভাবে কতক্ষন কেটেছিল জানিনা। হাত পায়ের সব জোর হারিয়ে ফেললাম। সব আশা
ছেড়ে দিয়ে মেঝের উপর ধপ করে বসে পড়লাম।
হটাৎ করে লিফটের দরজাটা খুলে গেল। তাকাতেই দেখি একজন সাদা চামড়ার মানুষ।
দরজাটা ধরে দাড়িয়ে। হাসি মুখে বললো- তুমি সমস্যাই পড়েছ?
আমি অনেকটা লাফ দিয়ে বেরিয়ে এলাম ঐ মৃত্যু কুপ থেকে।
লম্বা করিডোর, তারই কোন একটা রুমে আমার ত্রানকর্তা মিলিয়ে গেল নিমেষেই। কোথা
থেকে ও এল আর কোথায় বা গেল জানিনা।
আহ বাচার কি আনন্দ! কথাটা ভাবলে এখনো বুকটা কেপে ওঠে।
বুক ভরে একটা নিঃশ্বাস নিলাম।

আরো অসংখ্য আনন্দ বেদনার চিত্র ভেষে উঠছে মানষপটে।
কেন এত বেদনা, কেনই বা এত আনন্দ তার কিছুই বুঝতে উঠতে পারি না। এ যদি শাস্তি বা
পুরষ্কার হয় তাহলেই বা কেন, কিসের জন্য!
হঠাৎ করেই মনে হলো দেহটা ছেড়ে আমি বেরিয়ে এলাম নিঃশব্দে। যা কিছু পার্থিব যা
কিছু দৈহিক তার সব কিছুই পড়ে রইলো। ঈন্দ্রীয়গুলোও ওই দেহেরই অংশ তায় ওগুলোও
রয়ে গেল দেহের সাথেই।
দেহটা চেয়ারে হেলান দেয়া, যেন ঈন্দ্রীয়ের খাঁচা ওটা। আমি আর ঐ খাঁচায় আটক নই।
ওটার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। কখনো ছিল বলেও মনে হচ্ছে না।
আহ কি শান্তি কি তৃপ্তি! কোন জ্বালা নেই যন্ত্রনা নেই, নেই কোন দৈহিক মানষিক বা
আত্মিক চাহিদা। নেই কোন অবধারিত অনিশ্চিত মৃত্যু চিন্তা।

Category: Meaning of Life, Posts

Comment List

Your email address will not be published.