ছোট্ট স্বর্গ – বাবা ও ছেলে

(অনূদিত)

 

বাবা একদিন দেরিতে ক্লান্ত শরীরে বেশ বিরক্ত অবস্থাই কাজ থেকে  ঘরে ফিরলেন। দেখলেন তার পাচ বছরের ছেলে দরজায় তার জন্য অপেক্ষা করছে।

ছেলে: “বাবা, আমি কি তোমাকে একটি প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করতে পারি?”

জবাবে বাবা বললেন: “হ্যাঁ নিশ্চয়,বল?”

ছেলে: “বাবা, তুমি এক ঘন্টায় কত আয় কর?”

বাবা রেগে গিয়ে  বললেন: “এটি তোমার জানার কোন বিষয় নয়।  আর তুমি অযথা এমন প্রশ্ন কেন করছো?”

ছেলে: “আমি শুধু জানতে চাই। দয়া করে আমাকে বল তুমি এক ঘন্টায় কত আয় কর?”

পিতা: “তুমি যখন এতই নাছোড় তায় বলছি – আমি এক ঘন্টায় ২০ ডলার আয় করি।”

“ও আচ্ছা,”ছোট ছেলেটি মাথা নীচু করে কিছু একটা ভাবল,  তারপর বাবার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল, “বাবা, তুমি কি দয়া করে আমাকে ১০ ডলার ধার নিতে পারো?”

এবারে কর্ম ক্লান্ত বাবা খুব রেগে গেল, “তুমি যদি ফালতু কোন খেলনা বা এধরনের কিছু কেনার জন্য টাকা অপচয় করতে চাও তবে বাজে কথা না বলে সোজা নিজের ঘরে গিয়ে বিছানায় শুয়ে চিন্তা কর যে আমি এত কষ্ট করে উপার্জন করি আর তুমি এত স্বার্থপরের মত আচরন কর।”

বাবার ধমকে ছোট্ট ছেলেটি চুপচাপ নিজের ঘরে গিয়ে দরজা ভিতর থেকে ভেজিয়ে দিল।

-ছেলে এরকম একটা ফালতু জিনিসের জন্য টাকা চাওয়ার সাহস কি করে হল? কথাটা চিন্তা করে বাবার রাগ আর বাড়তে লাগলো।

ঘন্টা খানেক পর বাবার রাগ কমলে তিনি ভাবলেন –ছেলেটা এভাবেতো টাকা চায় না বললেই চলে, তাহলে নিশ্চয় ওর প্রয়োজনীয় কিছু কেনার জন্য ১০ ডলার লাগবে। মনে মনে তার একটু অপরাধ বোধ হল।

বাবা ছেলের ঘরের দরজায় গিয়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে দরজা খুললেন।

“তুই ঘুমোচ্ছিস বাবা?” তিনি জিজ্ঞাসা করলেন।

“না বাবা, আমি জেগে আছি,”ছোট ছেলেটি উত্তর দিল।

“আমি ভাবছিলাম, সম্ভবত আমি তোকে খুব আঘাত দিয়েছি, সারাদিন খাটাখাটনির পর আমার নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ ছিল না। এই নে বাবা তোর ১০ ডলার।”

টাকাটা নিয়ে ছোট ছেলেটি হেসে সোজা উঠে বসল। “ওহ, ধন্যবাদ বাবা!”

তারপরে, বালিশের নীচে থেকে কিছু দোমড়ানো মোচড়ানো নোট বের করল।

ছেলের কাছে টাকা থাকা সত্ত্বেও আবার টাকা চাইবার জন্য বাবা আবার রেগে যেতে শুরু করলেন। 

ছেলেটি ধীরে ধীরে টাকা গুলো গুনে বাবার দিকে তাকালো।

“তোর কাছে টাকা থাকার পরও তুই কেন আবার টাকা চায়লি? বাবা রাগ করলেন।

“কারণ আমার কাছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ছিল না, তবে এখন আছে”  ছেলে জবাব দিল।

“বাবা, আমার কাছে এখন ২০ ডলার আছে। আমি কি তোমার কাছ থেকে ১ ঘণ্টা সময় কিনতে পারি? দয়া করে কাল একটু আগে বাড়ি ফিরে এসো, আমরা এক সাথে ডিনার করব।

বাবার চোখ দুটো অশ্রুসিক্ত হয়ে গেল। তিনি ছেলেকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন।   

গল্পের মোরাল: সবার জীবনেই কাজ আর বাস্ততা থাকবেই, এটাই জীবন।  তবে তার ভিতর থেকেও আপনার জীবনে যারা আপন মানুষ তাদের জন্য কিছুটা সময় আলাদা করে রাখা দরকার। তাহলে জীবনটা আরো সুন্দর ও অর্থবহ হয়ে উঠবে

Category: Bangla, Moral Stories

Comment List

Your email address will not be published.