দৈবক্রম
ঢং ঢং করে ঘন্টা বাজিয়ে স্কুলের দপ্তরী প্রতিদিনকার মত নয়টা বাজার ঘোষণা দিল।
ঘন্টার শব্দটা বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার আগেই বিকট শব্দ করে স্কুলের গেটের সামনে
তেমাথায় একটা ঈট ভর্তি ট্রাক আর বাসের প্রায় মুখোমুখি সংঘর্ষ ঘটলো।
সব কর্মচাঞ্চল্যতা থামিয়ে আশে পাশের মানুষ ছুটে আসলো। আহাজারিতে সেখানকার
বাতাস ভারী হয়ে গেল। সকলে মিলে আহতদেরকে টেনে বের করে হাসপাতালে
স্থানান্তরের জন্য ছুটোছুটি করতে লাগলো।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় ঐ স্কুলের নবম শ্রেনীর ছাত্র অমর হাসপাতালে যাওয়ার পথেই শেষ
নিঃশ্বাস ত্যাগ করলো। ঘাতক ট্রাকের শিক্ষানবিশ ড্রাইভার অল্পবয়সী বাবলুর দুটো পা
কেটে বাদ দিতে হলো। পা দুটো ঠিক থাকলে বাবলুকে বোধহয় ধরা যেত না। কারণ
এ্যাকসিডেন্ট করে ড্রাইভারের পালিয়ে যাওয়ার অনেক ঘটনায় বাবলু শুনেছে ওর ওস্তাদের
কাছে। ওর ভাগ্য খারাপ। বেচারা পা দুটোও হারালো আবার মানুষ খুনের অপরাধে ওকে
এখন কোর্টে বিচারের সস্মুখিন হতে হয়েছে।
ওর বিধবা মা কেঁদে কেটে মানবাধিকার সংস্থার সহযোগিতায় কোর্টে ছেলের কেস লড়ার
জন্য একজন উকিল নিযুক্ত করেছে।
বাসের ড্রাইভার মধ্যবয়সী মানিক। ওটাই ছিল ওর দিনের ফিরতি ফার্ষ্ট ট্রিপ। শহর থেকে
প্রায় বিশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত উপজেলা সদর শ্মশানঘাট আর শহরের মধ্যে ও ওর
পুরনো বাসটা চালায়। সকাল সাতটায় রওয়ানা দিয়ে ষাড়ে সাতটায় শ্মশানঘাটে পৌছায়,
ওখানে আধাঘন্টা দেরী করে আটটায় রওয়ানা হয়ে ষাড়ে আটটায় শহরে পৌছায়। এ
ভাবে সারা দিনে চারটে ট্রিপ দেয় ও।
অমরের বাড়ীটা শহর থেকে আট কিলোমিটার দূরে শ্মশানঘাট যাওয়ার পাকা রাস্তার
ধারেই অবস্থিত। ওর স্কুল সকাল নয়টায় গুরু হয়। তায় প্রায় প্রতিদিন ওই বাসটাতে
করেই স্কুলে যায় অমর। মোটামুটি ষাড়ে আটটার পর পরই বাসটা ওকে পৌছে দেয়ার
ফলে অমর প্রতিদিনই নয়টার বেশ আগেই স্কুলে পৌছে যায়।
আজও তেমনি ভাবেই বাসটাতে উঠেছিলো অমর।
কিন্তু ভাগ্য খারাপ তায় শহরে প্রবেশ করার ঠিক আগে বাসের একটা টায়ার লিক হলো।
চাকাটা পরিবর্তন করতে গাড়ীর ড্রাইভার হেলপার কাজ করতে শুরু করলো।
বিরক্তিতে মনটা ভরে উঠলো অমরের। কিন্তু কিছুইতো করার নেই অসহায়ের মত বসে
থাকা ছাড়া। ঘড়িতে প্রায় ষাড়ে আটটা বেজে গিয়েছে।
এ সময় ওর স্কুলে থাকার কথা। কিন্তু নিরুপায় ও আজ। ওর অন্যান্য বন্ধুরা নিঃশ্চয়
এতক্ষনে পৌছে গিয়েছে। অন্যদিন আগে পৌছে কোন কাজ থাকে না গল্প করেই
কাটায়। কিন্তু আজকে ওর কিছু কাজ ছিল। হোম ওয়ার্কের একটা সরল অঙ্ক অমর কিছুতেই মিলাতে পারেনি। ভেবেছিল আজ ক্লাস শুরু হওয়ার আগে যে সময়টুকু পাওয়া যাবে
তখই বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে সেটা মিলিয়ে খাতায় তুলবে।
-ওর বাসটা থেমে থাকলে কি হবে অন্য কিছুইতো থেমে নেই। ভাবছিলো অমর।
একই সময়ে ঘাতক ট্রাকের হেলপার, শিক্ষানবিশ ড্রাইভার অমরের বয়সী বাবলু ঈট
ভাটায় বসে বিরক্তিভরা মনে ওর ড্রাইভার আসার অপেক্ষা করছিল। অনেক আগেই ট্রাক
লোড দিয়ে বসে আছে লেবাররা। ভোরেই ড্রাইভার ট্রাকটা ভাটাতে ঢুকিয়ে দিয়ে বাবলুকে
আসছি বলে এই যে গিয়েছে এখনো দেখা নেই।
ঈটের ভাটাটা শহরের উপকণ্ঠে। ট্রাকটা ভাটার মালিকেরই। কেউ ঈট কিনলে ঐ ট্রাকে
করে ঈটগুলো ডেলিভারী দিয়ে আসে। প্রায় ষাড়ে আটটা বাজলো, এতোক্ষনে দ্বিতীয় ট্রিপ
নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ড্রইভারের কোন খবরই নেই। বাবলু একটু আধটু ড্রাইভারী
জানে। ভাটার ভিতর ট্রাকটা এদিক ওদিক করার কাজটা ওই করে। ড্রাইভার ওর পাশে
বসে থাকা অবস্থায় মাঝে মধ্যে শহরের মধ্যে অল্প দুরত্বে ট্রাকটা চালিয়েছেও বাবলু।
– পাকা ড্রাইভার হতি হলি সাহসতো এটটু করতিই হবে বাবলু, এটটু আদটু রিক্সিও নিতি
হবে। তুইতো ভালোই চালাস, কিন্তু এখনতো আমি পাশে বসে আছি। একা একা চালাতে
পারলিই কেবল তখন কওয়া যাবে যে তুই পাকা ড্রাইভার। তারপর মালিকরে কয়ে তোর
জন্যি একটা লাইসেন যোগাড় করে একাজ তোরে দিয়ে আমি ইন্টার ডিসটিক ট্রাক
চালাবো। কথাগুলো বলে ড্রাইভার ওর পিটটা চাপড়ে দেয়।
ড্রাইভারের কথায় মৃদু হাসে বাবলু। কল্পনা করে যে এমনি একটা গাড়ীর ড্রাইভার হবে ও
একদিন। তারপর ওস্তাদের মত ইন্টারডিস্ট্রিক ট্রাকের ড্রাইভার।
অনেকক্ষন হয়ে গেল ড্রাইভার এলো না। ভাটার লেবাররাও ওকে তাগাদা দিতে লাগলো।
ভাটার ম্যানেজার এসে জানালো যে ঈট যেতে দেরী দেখে ওরা টেলিফোন করেছে
কয়েকবার। ম্যানেজার জানতে চায়লো কি বলবে ঠিকাদারকে।
কয়েকদিন ধরে আট দশ ট্রিপ করে ঈট যাচ্ছে ওখানে প্রতিদিন। সরকারী একটা
হাসপাতালের কাজ। বেশী দূর না, যেতে পনেরো মিনিটের মত লাগে। রাস্তাটাও ওর
নখদর্পনে।
কি করবে এখন, ভাবছিলো বাবলু।
-কিরে তুই পারবিনে একটা টান মেরে দিয়ে আসতে।
ম্যানেজারের কথায় ওর দিকে তাকালো বাবলু। ম্যানেজার মৃদু হাসছে মনে হলো। ভাবছে
বোধহয় বাবলু চালাতে জানে না।
একটু ইতস্ততঃ করলো বাবলু। তারপর সাহস যুগিয়ে বললো -পারবো না কেন, কত
চালাইছি।
-তবে ভাবতাছিস কি?
-লাইসেন নেই তো।
মৃদু হাসলো ম্যানেজার।
-এই পনের মিনিটের রাস্তায় চালাতে লাইসেন্স লাগে নাকি।
একটু থেমে আবার বললো -তবে থাক, আমি বরং মালিককে বলি যে ড্রাইভার আসেনি।
ও কথা বললে মালিক ওস্তাদের উপর রাগারাগি করবে। আর ও যদি একটু সাহস করে
ট্রিপটা দিয়ে আসতে পারে, তবে ওস্তাদকেও বাচানো যাবে, আর ওস্তাদ নিঃশ্চয় খুব খুশী
হবে। ম্যানেজার ততোক্ষনে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়েছে।
-আচ্চা ঠিক আছে আমিই যাচ্চি।
ওর কথায় ম্যানেজার থামলো। ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বললো একদিন তুই এই ট্রাকের
পাকা ড্রাইভার হবি, তার আর বেশি দেরী নেই। লেবাররা সব ট্রাকে উঠলো। বাবলু গাড়ী
ষ্ট্রার্ট দিল।
ভাটার গেটের কাছাকাছি যেতেই ড্রাইভিং ক্যাবিনের গায়ে থাপ্পড় দিয়ে লেবারদের
একজন ওকে গাড়ী থামাতে বললো।
গাড়ী থামালো বাবলু।
ড্রাইভার ম্যানেজারের অফিসে রিং করেছে বাবলুর সাথে কথা বলবে।
ষ্টার্ট বন্ধ করে বাবলু টেলিফোন ধরতে গেল।
ড্রাইভারের ছেলেটার খুব জর, ওকে ডাক্তার খানায় নিয়ে এসেছে। সেখান থেকেই কথা
বলছে ও। ড্রাইভার জানালো ছেলেটাকে বাসায় রেখেই ও চলে আসবে। বাবলু একটা
ট্রিপ নিয়ে রওয়ানা হয়েছে শুনে ভারী খুশী হলো ড্রাইভার। বললো -পাকা ডাইভার হতি
আর বেশী বাকি নেই তোর। শুধু স্কুলির সামনে তেমাথায় সাবধানে চালাস।
প্রায় পৌনে নয়টা বাজে। আল্লাহর নাম নিয়ে রওয়ানা হলো বাবলু। রাস্তাটা খুব একটা গ্যাঞ্জামের না।
শুধু ঐ তেমাথা বাদে। ট্রাফিক লাইট আছে, ওটা দেখেই আস্তে ধীরে পার হলেই আর
সমস্যা নেই।
কাছ থেকে দেখলো সবুজ বাতিটা জ্বলছে। মনে হলো ভাগ্যটা ভালো। তেমাথাটা পার
হতে পারলেই আর সমস্যা নেই। ভাবলো বাবলু।
গাড়ীর গতি একটু বাড়িয়ে দিল বাবলু। সিগন্যাল থেকে প্রায় দশ গজ দূরে থাকতেই
সবুজ বাতিটা নিভে লালটা জ্বলে উঠলো। কিন্তু তখন ব্রেক করার আর অবকাশ নেই। ওর
ঈট বোঝায় গাড়ীটা বিপরিত দিক থেকে আসা বাসটাকে মোড় নেয়ার সময় প্রায় মুখোমুখি
অবস্থাই পেটে আঘাত করে ঠেলে পাশে স্কুলের দেয়ালের গায়ে সজোরে ধাক্কা দিল।
-ধর্মাবতার! ঘটনার ঘটক বাবলু ওর দুটো পা হারিয়েছে। ও সম্পূর্ণ অচল এখন, প্রাণটায়
কেবল ওর শরীরের খাচায় ধুক ধুক করছে। ওই ছিল ওর বিধবা মায়ের একমাত্র ভরসা।
বিধবা বিভিন্ন বাড়ীতে কাজ করে যা পেত তার সাথে বাবলুর যৎসামান্য ইনকাম যোগ
করে তার আরো দুটো ছোট ছোট বাচ্চা নিয়ে গঠিত সংসারটা চালাতো।
-ধর্মাবতার! তাতে সত্যিকার অর্থে ওদের সংসার চলতো না। তবু ওরা স্বপ্ন দেখতো। আর
কদিন বাদেই বাবলু পাকা ড্রাইভার হলেই ওদের কষ্ট শেষ হয়ে যাবে। ছোট বাচ্চা দুটোর
ক্ষুধা পেটে যখন ঘুম আসতো না বিধবা মা তখন বাবলুর কথা বলে ওদেরকে স্বপ্নের জগতে নিয়ে ঘুম পাড়াতো। যে বাবলু নিজের পায়ে দাড়িয়ে পরিবারের ভার কাধে নেবে
সেই বাবলুই আর কোনদিন ওর পা দুটোর উপর ভর করে দাড়াতে পারবে না।
-ধর্মাবতার! বাবলু যদি আপনার দেয়া শাস্তির হাত থেকে বেচেও যায় তবে ওকে খায়িয়ে
পরিয়ে কি ভাবে বাচিয়ে রাখবে তা ওর বিধবা মা জানে না।
কোর্টের মধ্যে গুঞ্জন শোনা গেল। বিচারক হাতুড়ীটা টেবিলের উপর পিটিয়ে সবাইকে
থামিয়ে দিলেন।
-ধর্মাবতার, অমর মারা গিয়েছে। ওর মা বাবা আর ভাই বোনদের কান্নায় এখনো ভারী
হয়ে আছে পরিবারটির বাতাস।
-মানিক ড্রাইভার ওর মত আরো কয়েকজন মিলে ধার কর্জ, বাড়ী জমি সব বন্ধক রেখে
পুরনো বাসটা কিনে চালাতো আর স্বপ্ন দেখতো। ও বেচে গেলেও বাসটা বাচাতে
পারিনি। ওটা ঠিক ঠাক করে রাস্তায় নামানোর মত আর্থিক সামর্থ্য ওদের নেই। নতুন
ভাবে ব্যবসা শুরু করাতো দূরের কথা, ওরা ঋণের ভার কিভাবে মুক্ত হবে তায় ওরা জানে না।
কালো কাপড়ে আবৃত মাথায় সাদা কালো চুল আর মুখে সাদা দাড়ি ভরা উকিল থামলো
একটু। এজলাসের মধ্যে নিস্তব্দতার রাজত্ব।
-ধর্মাবতার, আমার মক্কেলের ব্যাপারে আমার বক্তব্য শেষ। আমার কাজটুকু আমি
করেছি। এখন ধর্মাবতার আপনার বুদ্ধি বিবেক আর আইনের ধারা অনুযায়ী দেয়া রায়
ওরা মাথা পেতে নেবে। অন্য কোন কোর্টে যাওয়ার ক্ষমতা ওদের নেই।
উকিল তার জন্য নির্ধারিত জায়গায় যেয়ে ওর কালো কাপড়ের আবরণটা খুলে ফেললো।
তারপর ধীরে ধীরে হেটে আসামীর কাঠগড়ায় পঙ্গু বাবলুর পাশে গিয়ে দাড়ালো। খুব
অসহায় দেখালো ওকে। হাত দুটো জোড় করে ধীরে ধীরে বিচারকের দিকে তাকালো।
ওর চোখ দুটো অশ্রু টলমল। কিছুক্ষন পূর্বে জোরালো যুক্তি তর্ক উপস্থাপনকারী উকিল
যেন ছিল অন্য কেউ। এখন তাকে উদভ্রান্ত আর হৃতবুদ্ধি দেখাচ্ছে।
-ধর্মাবতার! কেসটা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের সময় কতগুলো প্রশ্নের জবাব আমি মিলাতে
পারিনি। আপনি অনুমতি দিলে এখানে দাড়িয়ে সেগুলি উপস্থাপন করতে চায়।
বিচারক ওর এহেন আচরণে একটু অবাক হলেন।
মৌনতাকে অনাপত্তি ধরে নিয়ে করজোড়ে বলতে শুরু করলো উকিল।
-ধর্মবতার! দূর্ঘটনাটা ঘটলো নয়টার সময়। বাসটা প্রতিদিন পৌছে যায় নয়টার অনেক
আগেই। ওই দিনই বাসের টায়ারটা পাংচার হলো!
-ধর্মবতার! বাবলুর ওস্তাদ অর্থাৎ ঘাতক ট্রাকের ড্রাইভারের ছেলের ওই দিনই অসুস্থ হতে
হলো!
একটু থামলো উকিল।
-ধর্মাবতার, বাবলু যখন ঈটের ভাটার গেট দিয়ে বের হচ্ছিলো ঠিক তখনই ওর ড্রাইভারের
টেলিফোনটা আসলো!
-ধর্মাবতার, এ্যাকসিডেন্টের সাথে জড়িত দুটো গাড়ীই তাদের নিজ নিজ ইচ্ছার বিরুদ্ধে
নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে তেমাথায় পৌছালো। দুটো গাড়ী ঠিক ওই মুহুর্তে ওখানে
পৌছানোর নিখুত সমন্বয় ওরা কেউই করেনি। এ ধরণের একটা সমন্বয় করা কি বাবলু বা
মানিক অথবা অন্য কারো পক্ষে সম্ভব!
পিন পতন নিঃস্তব্দতা কোর্ট রুমে।
-তাহলে এত নিখূত সমন্বয় কে করলো ধর্মাবতার! এ কার কাজ!
মধ্য বয়স পার করা উকিল তার পুরু লেন্সের চশমাটা খুলে জামার কোণে মুছে নিয়ে
তাকালো বিচারকের দিকে।
-ধর্মাবতার, আইনের চোখে দোষটা বাবলুর। এ্যাকসিডেন্টের ফলে ওর পা দুটো
চিরকালের জন্য হারিয়েছে ও। ওর বিধবা মায়ের সব স্বপ্নই ভেঙ্গে খান খান হয়ে গিয়েছে।
স্বপ্ন ভেঙ্গে ধুলিস্যাৎ হয়েছে মানিকেরও। আর সম্ভাবনায় ভরা অমরের জীবন এমনিতেই
ঝরে গেল।
-এগুলো কি শাস্তি ধর্মাবতার না অন্য কিছু!
জমাটবাধা নিস্তব্দতা তা এজলাসের মধ্যে।
Category: Bangla, Short Story
I had a long career in Army. I was trained to follow orders, instructions and set rules, taking those as axiomatic. That strayed me a bit from free thinking as happens with all technology users. Basically I am a free thinker always and now in search of some basic truth in my own way. ([email protected]).
Such an amazing blog! Very informative!
Great info! Keep post great articles.
Looking for a CNA school consultant? ‘How to start your own CNA school’ is Dignity Educational Consulting expertise. Become our client and open a successful Nurse Assistant training school.
Simply want to say your article is as amazing. The clarity in your post is just great and i can assume you’re an expert on this subject. Fine with your permission allow me to grab your feed to keep up to date with forthcoming post. Thanks a million and please keep up the gratifying work.
I really love this article.
I just couldn’t leave your website before suggesting that I really enjoyed the usual information an individual supply on your visitors? Is gonna be back often in order to investigate cross-check new posts
When are you going to post again? You really entertain me!
Sweet blog! I found it while browsing on Yahoo News. Do you have any tips on how to get listed in Yahoo News? I’ve been trying for a while but I never seem to get there! Thank you
Thanks pertaining to discussing the following superb written content on your site. I ran into it on the search engines. I will check back again if you publish extra aricles.
Some really good information, Gladiolus I discovered this.
I’ll check back after you publish more articles.
Thanks for some other great post. Where else may anybody get that kind of information in such an ideal method of writing? I’ve a presentation next week, and I am at the look for such information.
You are not right. I am assured. I can prove it. Write to me in PM, we will talk.
I have been surfing online more than three hours today, yet I never found anything that grabbed my interest as much as this piece.
This is definitely a wonderful webpage, thanks a lot..
You write Formidable articles, keep up good work.
Wonderful beat ! I wish to apprentice while you amend your web site, how could i subscribe for a blog site? The account helped me a acceptable deal. I had been a little bit acquainted of this your broadcast offered bright clear concept
Very fine blog.
Very interesting subject, appreciate it for posting. “Integrate what you believe into every single area of your life.” by Meryl Streep.
This is an awesome entry. Thank you very much for the supreme post provided! I was looking for this entry for a long time, but I wasn’t able to find a honest source.
Glad to be one of many visitants on this amazing site : D.
Good points – – it will make a difference with my parents.
Hey! awesome blog! I happen to be a daily visitor to your site (somewhat more like addict 😛 ) of this website. Just wanted to say I appreciate your blogs and am looking forward for more!
I had fun reading this post. I want to see more on this subject.. Gives Thanks for writing this nice article.. Anyway, I’m going to subscribe to your rss and I wish you write great articles again soon.