বেওয়ারিস
প্রথমে লেখাপড়া আর পরে চাকুরীর সুবাদে জীবনের বেশীর ভাগ সময় কেটেছে বাইরে বাইরে অজানা শহরে। আর সরকারী চাকুরী শেষে সেখানেই বাড়ী বানিয়ে বসবাস করছি।
নাড়ীর টান বলে যে একটা কথা আছে সেটা অনুভব করলাম অনেক পরে। পঞ্চইন্দ্রিয়ের দৌরাত্ম একটু একটু করে যখন কমতে শুরু করলো তখনই অনুভব করতে লাগলাম নাড়ীর সে টান। আর বোধহয় সে টানেই বাপ দাদার ভিটেতে নিজের মন মত একটা বাড়ী তৈরী করলাম। নিজের নকশা, নিজের চিন্তা চেতনা দিয়ে মিস্ত্রি ডেকে ধীরে ধীরে বানালাম আমার বাড়ীটা।
চারদিকে বুক অব্দি উচু বারান্দা দেয়া দোতলা বাংলো প্যাটার্নের বাড়ী। নিচে তিনটে রুম সহ বাথ কিচেন ইত্যাদি। আর দোতলায় প্রশস্ত ছাদের মাঝখানে একটা ঘর। এক তলার চারদিকে চালাঘরের আদলে স্লান্টিং ছাদ দিয়ে বারান্দা। খোলা সে বারান্দায় বসলে সামনে খোলা প্রান্তর, দৃষ্টি যতদুর যায় তার সবটুকু দেখা যায়। এখানে বসলে মনে হয় বিশ্ব দেখা যায়।
দিনে দিনে এখানকার সব আপন মানুষগুলো পর হয়ে গেলেও এই বাড়ীটা আমার খুবই আপন। তায়তো ছুটে আসি একটু ফুসরত পেলেই।
এ যে আমার সৃষ্টি। নিজের কাছে নিজের সৃষ্টি সব সময়ই অনন্য। বিধাতা তাঁর নিজের এ বৈশিষ্ট্যটা বোধহয় তাঁর সব সৃষ্টির মধ্যেই গেথে দিয়েছেন।
মসজিদটা খুব কাছে, আযান শুনে হেটে যেয়ে জামাত ধরা যায়। আর পারিবারিক গোরস্থানটাও পাঁচ মিনিটের হাটা রাস্তা।
মনে জোর পায় এখানে আসলে।
গত কয়েক বছর ধরে একটু ফুসরত পেলেই হুট করে চলে আসি বাড়ীতে।
বাড়ীটা দেখেশুনে রাখার জন্য একটা মানুষ রাখা আছে নাম মোড়ল। বাবার আমল থেকেই ও আমাদের বাড়ীতে।
লম্বাটে ছিপছিপে গড়নের শরীর, রংটা শ্যামলা। বয়স কম করে হলেও আশি পঁচাশি হবে।
বাড়ী সংলঘ্ন গার্ডেনের কোনার দিকে একটা ঘরে থাকে ও। পাহারা দেয়, লন পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে রাখে। এগুলোই ওর কাজ। থাকা খাওয়া কাপড় চোপড় দেয়া ছাড়াও মাসিক হারে বেতন দিই ওকে।
বাড়ীতে কাজ না থাকলে সময় বুঝে অন্যের বাড়ীতেও কাজ করে ও। আমার কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে এ ব্যাপারে।
অন্যের বাড়ীতে কাজ করার কি দরকার জিজ্ঞেস করেছিলাম।
-মানুষ জনের একটু আধটু সাহায্য করা। আর কাজ না থাকলি ভাললাগে না খোকা।
কারো কোন কাজ করে দিলে তার জন্য বাড়তি টাকা নেয় না মোড়ল। ও বলে এ গায়ের সবাই ওর আপন, তাছাড়া একা মানুষ খাওয়া পরার সমস্যা নেই টাকা দিয়ে কি করবে।
পিছন ফিরে তাকানোর মত কেউ নেই কিচ্ছু নেই ওর। আসামের কোন এক খানে বাড়ী বলে ও বলে। ভালো করে জানে না কিছুই নিজের সম্পর্কে। আর তা নিয়ে কোন মাথা ব্যথাও নেই ওর। ছোট বয়সে কি ভাবে যেন এসেছিল এ অঞ্চলে। তারপর দিনে দিনে অনেকদিন হয়ে গেল।
এ তল্লাটে নেই কেউ ওর।
বাবা বেচে থাকতে ওকে বিয়ে দিতে চেয়েছিল। কিন্তু রাজি হয়নি ও। বাবাকে ও কি একটা বলেছিল। পরে বাবাও এ নিয়ে আর কথা বলেনি।
ওর গায়ের রংটা এখানকার অন্যান্য সবার মত হলেও চোখে নাকে বোঝা যায় ও এখানকার কেউ না, অন্যখানের মানুষ।
ও যখন আনমনে বসে থাকে তখন ওকে বড্ড একাকী লাগে।
বাড়ীটা আকড়েই পড়ে থাকে ও। এটাকে দেখেশুনে রাখায় যেন ওর জীবনের একমাত্র লক্ষ। বাড়ীটার প্রতি আমার আবেগজড়ানো সম্পর্কটা ও বোঝে।
অনেকদিন পর বাড়ীতে আসলে আমার শরীর এবং পরিবারের অন্যান্যদের খোজখবর নেয়ার পর মোড়ল নিজের থেকেই এক এক করে এ বাড়ীর খোজ খবর দিতে থাকে।
বাড়ীর কোন দেয়ালের রং নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, সিড়ির কোন কোনাটা একটু ভেঙ্গে গিয়েছে বা মেঝের কোথায় ফাটল ধরেছে। এ ধরণের সব কথা বলে। ভুলেও ওর নিজের সম্পর্কে একটা কথাও বলে না।
এ সমস্ত কথা বলতে বলতে আশে পাশের অন্য লোকজন এসে পড়ে। আলোচনার প্রসঙ্গ পরিবর্তন হয়ে যায়।
কত বার ভেবেছি ওর নিজের কথা একান্তে জিজ্ঞেস করবো। ওর অতীত বর্তমান আর ভবিষতের কথা। কিন্তু হয়ে ওঠে না। প্রথমতঃ খুব কৌশলে ও প্রসঙ্গ পাল্টায় আর অনেকদিন পর বাড়ীতে আসলে নানা কাজ কর্মের ভিড়ে আমিও ব্যস্ত হয়ে পড়ি।
ভরা আষাড়, বৃষ্টিও হচ্ছে প্রচুর। আকাশ মেঘে ঢাকা। প্রাইভেট কার থেকে নেমে প্রায় দৌড়ে বারান্দায় উঠে এসেছি।
ফেরার কোন তাড়া নেই এবার। হাতে অজস্র সময়।
দিন প্রায় বারোটা কিন্তু ঘড়ি না দেখলে বোঝার উপায় নেই। বৃষ্টির অবিরাম ফোটায় সব কিছুই ঝাপসা লাগছে। মৃদু বাতাসে সবুজ ঘাসের চাদরে ঢাকা প্রশস্ত লনের গা ঘেসে দাড়ানো মেহেগুনির সবুজ পাতাগুলো হাত পা নেড়ে নেড়ে কেবল ভিজছে। কেউ কোথাও নেই, সাড়া শব্দ নেই কারো, কেবল বৃষ্টির সা সা শব্দ।
বাড়িতে আসলে দোতলার ঘরটায় থাকি।
সোজা উপরে উঠে ঘরটা খুলে মাথা মুছে নিলাম। পরনের আধা ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে নিচে নেমে আসলাম। তারপর ইজি চেয়ারটা বের করে উচু বারান্দায় পেতে গাটা এলিয়ে দিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করলাম বৃষ্টিটাকে অনুভব করার জন্য।
-খোকা কখন এলে।
মোড়লের ডাকে যেন ধ্যান ভাঙলো।
বাবা মারা যাওয়ার পর থেকে মোড়ল নিজ উদ্দ্যেগেই আমাকে খোকা বলে ডাকে। বাবা ওভাবেই ডাকতো আমাকে। খুব দরদ দিয়ে ডাকে মোড়ল আমাকে ওনামে।
ওর কণ্ঠটা কেমন যেন বেসুরো লাগলো আজ। কিসের যেন একটা অভাব বোধ হলো ওর কণ্ঠে। একটু নড়ে চড়ে বসলাম। তাকালাম ওর দিকে।
মোড়ল ঘাড়ের গামছা দিয়ে মেঝেটা একটু ঝেড়ে নিয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসলো।
বিষণ্ণ মনে হলো ওকে। প্রায় মাস ছয়েক পর দেখছি, অনেক শুখিয়ে গেছে।
ওর বাধা ঢংয়ে আমার পরিবারের সকলের খোজ খবর নিল মোড়ল। তারপর বাড়ী সম্পর্কে সব তথ্য জানাতে লাগলো।
কথা বলতে বলতে ও কেমন যেন হাফিয়ে উঠছিল। থেমে থেমে কথা বলছিলো।
ভাবছি আজ প্রসঙ্গ পেড়ে ওর নিজের সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবো।
-খোকা বর্ষা চলে গেলে তোমার বাড়ীটা ঘর রং করা দরকার।
কোন জবাব দিলাম না ওর কথার।
-তোমার শরীর এখন কেমন?
কথাটা জিজ্ঞেস করতে আমাকে বেশ প্রস্তুতি নিতে হলো। কারণ বলতে গেলে ওর নিজ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করা হয়নি কখনো।
আচমকা একটু কাসলো ও।
বুঝলাম মোড়লও এমন একটা প্রশেড়বর জন্য প্রস্তুত ছিল না তায় নিজেকে বোধহয় একটু গুছিয়ে নিল।
-আমার খাওয়া পরা আর থাকারতো কোন সমস্যা নেই। তায় ও নিয়ে চিন্তা করো না তুমি।
মোড়লের কথার অর্থ ঠিক বুঝলাম না।
-এবার দেখে মনে হচ্ছে তুমি শুখিয়ে গিয়েছ!
আরো একটু আন্তরিক হওয়ার চেষ্টা করলাম।
মৃদু হাসলো মোড়ল।
-অনেকদিন পর দ্যখছোতো তায় অমন মনে হচ্ছে।
ও কোন অভিযোগ করলো কিনা বুঝলাম না।
ভাবছি ওর আত্মীয় পরিজন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। কিন্তু ঠিক সাহস করতে পারলাম না। গত পঞ্চাশ বছর ধরে যে ব্যাপারে ওকে কখনও জিজ্ঞেস করা হয়ে ওঠেনি তা কি করে এখন জিজ্ঞেস করি।
-তোমরা ছাড়া আমারতো আর কেউ নেই খোকা, তায় প্রানটা কেবল এই বাড়ী আর তোমাদের জন্যই কান্দে।
ভাবলাম প্রসঙ্গ যখন উঠেছেই তখন ওর আত্মীয় পরিজনের কথা জিজ্ঞেস করি।
-জ্ঞান হওয়া থেকেই এ বাড়ীতে থাকছি। তোমার বাবাই আমাকে দয়া করে জায়গা দিয়েছিল এ বাড়ীতে। বড় দয়ার শরীল ছিল তিনার। চোখ বোজার আগে তিনি চেয়েছিলেন এই অনাথের শিকড়টা এ তল্লাটে আর একটু পাকা করে গাড়ে দিতে।
একটা দীর্ঘশ্বাস টানলো মোড়ল।
-আমি সব খুলে বলেছিলাম তোমার বাবাকে। বিধিই যা চায়নি মানুষ তা কি করে করবে বল। সম্বলতো শুধু এই শরীলটা, তায় অত চিন্তা করিনে।
নিশ্চুপ হয়ে শুনছিলাম ওর কথা।
বেশ কিছুক্ষন নিস্তব্দতা।
-খোকা সেদিন একটা বুড়ো ফকির ভিক্ষে করতি আসে হটাৎ করেই মরে গেল তোমার বাড়ীর সামনে ঐ তেমাথাই।
-তায় নাকি!
-হ্যে খোকা। ফকিরটা অনেক বছর ধরে প্রায় প্রতিদিনই আসতো এ গায়ে। সবাই চেনে তাকে। গ্রামের সব মানুষ জড় হয়ে খুব দুঃখ করলো।
একটু থেমে একটা ঢোক গিললো ও।
-আমিও গেছিলাম লাশটা দেখতি। সবাই ব্যস্ত, আফসোচ করে চলে গেল একে একে। মসজিদের ঈমাম সাহেবই পত্তম লাশের দাফনের কথা বললো। কিছু দরোদী মানুষ লাশের পাশে পকেট থেকে টাকা পয়সাও দিয়ে গেল।
একটা চাপা নিঃশ্বাস ছাড়লো মোড়ল।
-সমস্যা হলো লাশটা কোন গোরস্থানে দাফন করা হবে তা নিয়ে। তুমিতো জানই এগাঁয়ের সব গোরস্থানই পারিবারিক। কেবল নিজের মানুষেদেরই দাফন করা হয় সেখেনে।
-সবাই ওরে চিনলি কি হবে, ফকিরিরতো কোন পরিচয় নেই এখেনে, তায়তো কোন গোরস্থানেই ওর কবরের ব্যবস্থা করা গেল না।
-অগত্য দুএকজন দরদী মানুষ নিজে রাজি হলিও পরিবারের অন্য অন্য সবার মতামত নিতি হবে বলে জানালো। বেতনে কাজ করা ঈমাম সাহেব বললেন গোষ্ঠির সবার মতামত কি ভাবে নেবেন তিনি। সবাই যে হাজির নেই, আর থাকলিও মত যে দেবে তার নিশ্চয়তা কি।
নিশ্চুপ হয়ে শুনছি ওর কথা।
-সকালে মরেছে, ততোক্ষনে প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেল কিন্তু লাশটা ওভাবেই পড়ে রইলো।
ঘাড়ে রাখা গামছায় চোখ দুটো মুছে নিল, বুঝলাম মোড়ল কাঁদছে নিরবে।
-সন্ধ্যের আগে সদর থেকে পুলিশ আসলো। রিপোর্ট লিখলো। লাশটা মোড়ার জন্য কিছু একটা খোজ করতি লাগলো। দৌড় দিয়ে আমি আমার মাদুরটা নিয়ে দিলাম।
– সন্ধ্যের পর সেই মাদুরি মুড়ে ভ্যানে করে নিয়ে গেল লাশ।
কথা বলতে বলতে গলাটা ধরে আসলো মোড়লের।
-পুলিশির হাবিলদারকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন লাশ। তিনি বললেন বেওয়ারিস লাশ এটা।
ফুস ফুস শব্দ হচ্ছে। নীরবে কাঁদছে মোড়ল!
বিষয়টা হৃদয়বিদারক। কিন্তু মোড়লকে তা ওভাবে ব্যথিত করলো কিভাবে তা সঠিক বুঝলাম না।
-ভিক্ষুকটি ওর আপন কেউ ছিল কি! ভাবলাম মনে মনে।
-ও কি তোমার কিছু হতো মোড়ল?
-খোকা, বেওয়ারিস লাশটা আমার চিনা।
উঠে দাড়ালো মোড়ল। কিছু না বলে ভরা বৃষ্টির মধ্যেই হাটা শুরু করলো।
বিকট শব্দে মেঘ গর্জন করে বিদ্যুৎ চমকালো, আকাশের বুক চিরে, আকাশ ফুটো করে অঝরে বৃষ্টি ঝরতে লাগলো।
Category: Bangla, Short Story
I had a long career in Army. I was trained to follow orders, instructions and set rules, taking those as axiomatic. That strayed me a bit from free thinking as happens with all technology users. Basically I am a free thinker always and now in search of some basic truth in my own way. ([email protected]).
Such an amazing blog! Very informative!
Sometimes, the sheer magnitude of the information seems overwhelming.
I believe you have remarked on some very interesting points , thankyou for the post.
WoW decent article. Can I hire you to guest write for my blog? If so send me an email!
That is really fascinating, You’re an excessively skilled blogger. I’ve joined your rss feed and look forward to in the hunt for extra of your magnificent post. Additionally, I’ve shared your website in my social networks!
nicee content keep writing
I don’t normally comment on blogs.. But nice post! I just bookmarked your site
Hello. Great job. I did not expect this on a Wednesday. This is a great story. Thanks!
You are my inhalation , I possess few web logs and very sporadically run out from to brand 🙁
We’re developing some community services to respond to this, and your blog is helpful.
I can’t go into details, but I have to say its a good article!
Great blog right here! You seem to put a significant amount of material on the site rather quickly.
Hello this is kinda of off topic but I was wondering if blogs use WYSIWYG editors or if you have to manually code with HTML. I’m starting a blog soon but have no coding knowledge so I wanted to get advice from someone with experience. Any help would be enormously appreciated!
We are a group of volunteers and starting a new initiative in our community. Your blog provided us with valuable information to work on|.You have done a marvellous job!
I have been curious about these trends, and you have really helped me. I have just told a few of my friends about this on FaceBook and they love your content just as much as I do.
You ma’am have a way with words. Thank you very much!
How come you do not have your website viewable in mobile format? cant see anything in my Droid.
The post is absolutely fantastic! Lots of great info and inspiration, both of which we all need! Also like to admire the time and effort you put into your website and detailed info you offer! I will bookmark your website!
I’ll check back after you publish more articles.
There is so much to try to understand